পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ।

 মঙ্গলার কুটীর যশোহরের এক প্রান্তে ছিল। সেইখানে বসিয়া সে মালা জপ করিতেছিল। এমন সময়ে শাকসব্‌জির চুব্‌ড়ি হাতে করিয়া রাজবাটীর দাসী মাতঙ্গিনী আসিয়া উপস্থিত হইল।

 মাতঙ্গ কহিল, “আজ হাটে আসিয়াছিলাম, অমনি ভাবিলাম, অনেক দিন মঙ্গলাদিদিকে দেখি নাই, তা একবার দেখিয়া আসিগে। আজ ভাই অনেক কাজ আছে, অধিকক্ষণ থাকিতে পারিব না।” বলিয়া চুবড়ি রাখিয়া নিশ্চিন্ত ভাবে সেই খানে বসিল। “তা, দিদি তুমি ত সব জানই, সেই মিন্সে আমাকে বড় ভালবাসিত, ভাল এখনো বাসে, তবে আর একজন কা’র পরে তার মন গিয়াছে আমি টের পাইয়াছি—তা’ সেই মাগীটার ত্রিরাত্রির মধ্যে মরণ হয় এমন করিতে পার না?”

 মঙ্গলার নিকট গরু হারানো হইতে স্বামী হারানো পর্য্যন্ত সকল-প্রকার দুর্ঘটনারই ঔষধ আছে, তা’ ছাড়া সে বশীকরণের এমন উপায় জানে যে, রাজবাটীর বড় বড় ভৃত্য মঙ্গলার কুটীরে কত গণ্ডা গণ্ডা গড়াগড়ি যায়! যে মাগীটার ত্রিরাত্রির মধ্যে মরণ হইলে মাতঙ্গিনী বাঁচে সে আর কেহ নহে স্বয়ং মঙ্গলা!

 মঙ্গলা মনে মনে হাসিয়া কহিল, “সে মাগীর মরিবার জন্য বড় তাড়াতাড়ি পড়ে নাই, যমের কাজ বাড়াইয়া তবে সে মরিবে।” মঙ্গলা হাসিয়া প্রকাশ্যে কহিল, “তোমার মতন রূপসীকে ফেলিয়া আর কোথাও মন যায় এমন অরসিক আছে নাকি? তা’ নাতনী, তোদর ভাবনা নাই। তাহার মন তুমি ফিরিয়া পাইবে। তোমার চোখের মধ্যেই ঔষধ আছে, একটু বেশি করিয়া প্রয়োগ করিয়া দেখিও তাহাতেও যদি না হয়, তবে এই শিকড়টি তাহাকে পানের সঙ্গে খাওয়াইও।” বলিয়া এক শুক্‌ন শিকড় আনিয়া দিল।