পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 ভাগবত কহিল—“কই, তােমার ভাবে ত তাহা বােধ হইল না!” সীতারামের বদান্যতা ভাগবতের বড় সহ্য হয় নাই, মনে মনে কিছু চটিয়াছিল!

 সীতারাম কহিল, “না, ভাই কথার কথা বলিতেছি! আজ না যায় ত দশদিন পরে ত যাইবে।”

 ভাগবত কহিল—“তা, রাজা যদি অন্যায় বিচার করেন ত আমরা কি করিতে পারি।”

 সীতারাম কহিল, “আহা যুবরাজ যখন রাজা হইবে, তখন যশােরে রামরাজত্ব হইবে ততদিন যেন আমরা বাঁচিয়া থাকি।”

 ভাগবত চটিয়া গিয়া কহিল, “ওসব কথায় আমাদের কাজ কি ভাই? তুমি বড়মানুষ লােক, তুমি নিজের ঘরে বসিয়া রাজা উজীর মার, সে শােভা পায়—আমি গরীব মানুষ, আমার অতটা ভরসা হয় না!”

 সীতারাম কহিল, “রাগ কর কেন দাদা? কথাটা মন দিয়া শােনই না কেন?” বলিয়া চুপি চুপি কি বলিতে লাগিল।

 ভাগবত মহাক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “দেখ, সীতারাম আমি তােমাকে স্পষ্ট করিয়া বলিতেছি, আমার কাছে অমন কথা তুমি মুখে উচ্চারণ করিও না।”

 সীতারাম সে দিন ত চলিয়া গেল। ভাগবত ভারি মনােযােগ দিয়া সমস্ত দিন কি একটা ভাবিতে লাগিল, তাহার পরদিন সকাল বেলায় সে নিজে সীতারামের কাছে গেল। সীতারামকে কহিল, “কাল যে কথাটা বলিয়াছিলে বড় পাকা কথা বলিয়াছিলে।”

 সীতারাম গর্ব্বিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “কেমন দাদা বলি নাই!”

 ভাগবত কহিল, “আজ সেই বিষয়ে তােমার সঙ্গে পরামর্শ করিতে আসিয়াছি।”