হইল না। আবার অনেক ক্ষণের পর উদয়াদিত্য চারিদিকে চাহিয়া আকাশের দিকে চাহিয়া বসন্তরায়ের মুখের দিকে চাহিয়া আকুল কণ্ঠে কহিলেন—“দাদা মহাশয় আজ আমি স্বাধীনতা পাইয়াছি,—তােমাকে পাইয়াছি, আমার আর সুখের কি অবশিষ্ট আছে? এ মুহূর্ত্ত আর কতক্ষণ থাকিবে?” কিয়ৎক্ষণ পরে সীতারাম যােড়হাত করিয়া কহিল —“যুবরাজ, নৌকায় উঠুন।”
যুবরাজ চমক ভাঙিয়া কহিলেন—“কেন, নৌকায় কেন?”
সীতারাম কহিল—“নহিলে এখনি আবার প্রহরীরা আসিবে।”
উদয়াদিত্য বিস্মিত হইয়া বসন্তরায়কে জিজ্ঞাসা করিলেন, “দাদা মহাশয়, আমরা কি পালাইয়া যাইতেছি?”
বসন্তরায় উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া কহিলেন, “হাঁ ভাই, আমি তােক চুরি করিয়া লইয়া যাইতেছি! এ যে পাষাণ-হৃদয়ের দেশ—এরা যে তােকে ভালবাসে না! তুই হরিণ-শিশু এ ব্যাধের রাজ্যে বাস করিস্—আমি তোকে প্রাণের মধ্যে লুকাইয়া রাখিব, সেখানে নিরাপদে থাকিবি!” বলিয়া উদয়াদিত্যকে বুকের কাছে টানিয়া আনিলেন—যেন তাঁহাকে কঠোর সংসার হইতে কাড়িয়া আনিয়া স্নেহের রাজ্যে আবদ্ধ করিয়া রাখিতে চান্।
উদয়াদিত্য অনেক ক্ষণ ভাবিয়া কহিলেন, “না দাদা মহাশয়, আমি পালাইতে পারিব না।”
বসন্তরায় কহিলেন, “কেন দাদা, এ বুড়াকে কি ভুলিয়া গেছিস্।”
উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমি যাই—একবার পিতার পা ধরিয়া কাঁদিয়া ভিক্ষা চাই গে, তিনি হয়ত রায়গড়ে যাইতে সম্মতি দিবেন।”
বসন্তরায় অস্থির হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “দাদা, আমার কথা শােন্— সেখানে যাস্নে, সে চেষ্টা করা নিস্ফল।”