পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

বার চারিদিক হাতড়াইয়া দেখিল। একটা সিন্ধুকের উপর হুঁচট খাইয়া পড়িয়া গেল, দুই একবার দেয়ালে মাথা ঠুকিয়া গেল। সীতারামের গা ছম্‌ছম্‌ করিতে লাগিল। মনে হইল, কে যেন ঘরে আছে। কাহার যেন নিশ্বাস প্রশ্বাস শুনা যাইতেছে—আস্তে আস্তে পাশের ঘরে গেল। গিয়া দেখিল, রুক্মিণীর শয়নগৃহ হইতে আলো আসিতেছে। প্রদীপটা এখনাে জ্বলিতেছে মনে করিয়া সীতারামের অত্যন্ত আনন্দ হইল। তাড়া তাড়ি সেই ঘরের দিকে গেল। ও কে ও! ঘরে বসিয়া কে! বিনিদ্র নয়নে চুপ করিয়া বসিয়া কেও রমণী থরথর করিয়া কাঁপিতেছে। অর্দ্ধাবৃত দেহে ভিজা কাপড় জড়ানো, এলােচুল দিয়া ফোঁটা ফোঁটা করিয়া জল পড়িতেছে। কাঁপিতে কাঁপিতে তাহার দাঁত ঠক্ ঠক্ করিতেছে। ঘরে একটি মাত্র প্রদীপ জ্বলিতেছে। সেই প্রদীপের ক্ষীণ আলাে তাহার পাংশু বর্ণ মুখের উপর পড়িতেছে—পশ্চাতে সেই রমণীর অতি বৃহৎ এক ছায়া দেয়ালের উপর পড়িয়াছে। ঘরে আর কিছুই নাই—কেবল সেই পাংশু মুখশ্রী—সেই দীর্ঘ ছায়া আর এক ভীষণ নিস্তব্ধতা! ঘরে প্রবেশ করিয়াই সীতারামের শরীর হিম হইয়া গেল। দেখিল ক্ষীণ আলােক, এলোচুল, ভিজা কাপড়ে সেই মঙ্গলা বসিয়া আছে। সহসা দেখিয়া, তাহাকে প্রেতনী বলিয়া মনে হইল। অগ্রসর হইতেও সীতারামের সাহস হইল না—ভরসা বাঁধিয়া পিছন ফিরিতেও পারিল না! সীতারাম নিতান্ত ভীরু ছিল না; অল্পক্ষণ স্তব্ধভাবে দাঁড়াইয়া অবশেষে একপ্রকার বাহ্যিক সাহস ও মৌখিক উপহাসের স্বরে কহিল—“তুই কোথা হইতে! মাগী, তাের মরণ নাই না কি!” রুক্মিণী কট্ মট্‌ করিয়া খানিকক্ষণ সীতারামের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল—তখন সীতারামের প্রাণটা তাহার কণ্ঠের কাছে আসিয়া ধুক্‌ধুক্‌ করিতে লাগিল। অবশেষে রুক্মিণী সহসা বলিয়া উঠিল, “বটে! তােদের এখনাে সর্ব্বনাশ হইল না; আর আমি মরিব!” উঠিয়া দাঁড়াইয়া হাত নাড়িয়া কহিল, “যমের দুয়ার হইতে ফিরিয়া