পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৬৭

আসিলাম! আগে, তােকে, আর যুবরাজকে চুলায় শুয়াইব, তোদের চুলা হইতে দু মুটা ছাই লইয়া গায়ে মাখিয়া দেহ সার্থক করিব—তার পরে যমের সাধ মিটাইব—তাহার আগে যমালয়ে আমার ঠাঁই নাই।”

 রুক্মিণীর গলা শুনিয়া সীতারামের অত্যন্ত সাহস হইল। সে সহসা অত্যন্ত অনুরাগ দেখাইয়া রুক্মিণীর সহিত ভাব করিয়া লইবার চেষ্টা। করিতে লাগিল। খুব যে কাছে ঘেঁসিয়া গেল, তাহা নহে, অপেক্ষাকৃত কাছে আসিয়া কোমল স্বরে কহিল,—“মাইরি ভাই, ঐ জন্যই ত রাগ ধরে! তােমার কখন্ যে কি মতি হয়, ভাল বুঝিতে পারি না! বল্‌ত মঙ্গলা, আমি তাের কি করেছি! অধীনের প্রতি এত অপ্রসন্ন কেন? মান করেছিস্ বুঝি ভাই? সেই গানটা গাব?”

 সীতারাম যতই অনুরাগের ভাণ করিতে লাগিল রুক্মিণী ততই ফুলিয়া উঠিতে লাগিল—তাহার আপাদমস্তক রাগে জ্বলিতে লাগিল—সীতারাম যদি তাহার নিজের মাথার চুল হইত, তবে তাহা দুই হাতে পট্‌পট্‌ করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিতে পারিত, সীতারাম যদি তাহার নিজের চোখ হইত, তবে তৎক্ষণাৎ তাহা নখ দিয়া উপাড়াইয়া পা দিয়া দলিয়া ফেলিতে পারিত। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, কিছুই হাতের কাছে পাইল না! দাঁতে দাঁতে লাগাইয়া কহিল,“একটু রোস; তােমার মুণ্ডপাত করিতেছি” বলিয়া থর্‌থর্‌ করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে বঁটির অন্বেষণে পাশের ঘরে চলিয়া গেল। এই কিছুক্ষণ হইল—সীতারাম গলায় চাদর বাঁধিয়া রূপক অলঙ্কারে মরিবার প্রস্তাব উত্থাপিত করিয়াছিল, কিন্তু রুক্মিণীর চেহারা দেখিয়া তাহার রূপক ঘুরিয়া গেল, এবং চৈতন্য হইল যে, সত্যকার বঁটির আঘাতে মরিতে এখনাে সে প্রস্তুত হইতে পারে নাই—এই নিমিত্ত অবসর বুঝিয়া তৎক্ষণাৎ কুটীরের বাহিরে সরিয়া পড়িল। রুক্মিণী বঁটি হস্তে শূন্য গৃহে আসিয়া ঘরের মেজেতে সীতারামের উদ্দেশে বারবার আঘাত করিল।

 রুক্মিণী এখন “মরিয়া” হইয়াছে। যুবরাজের আচরণে তাহার দুরাশা