মুক্তিয়ার খাঁ হাত যোড় করিয়া কহিল—“এখনি ফিরিতে পারিব না।”
যুবরাজ ভীত হইয়া কহিলেন—“কেন?” মুক্তিয়ার খাঁ কহিল— “আর একটি আদেশ আছে, তাহা পালন না করিয়া যাইতে পারিব না।”
যুবরাজ ভীত স্বরে কহিলেন—“কি আদেশ!”
মুক্তিয়ার খাঁ কহিল—“রায়গড়ের রাজার প্রতি মহারাজা প্রাণদণ্ডের আদেশ করিয়াছেন।”
যুবরাজ চমকিয়া উচ্চস্বরে কহিয়া উঠিলেন—“না, করেন নাই, মিথ্যা কথা!”
মুক্তিয়ার খাঁ কহিল—“আজ্ঞা যুবরাজ, মিথ্যা নহে। আমার নিকট মহারাজের স্বাক্ষরিত পত্র আছে।”
যুবরাজ সেনাপতির হাত ধরিয়া ব্যগ্র হইয়া কহিলেন, “মুক্তিয়ার খাঁ, তুমি ভুল বুঝিয়াছ। মহারাজ আদেশ করিয়াছেন যে যদি উদয়াদিত্যকে না পাও, তাহা হইলে বসন্তরায়ের—আমি যখন আপনি ধরা দিতেছি, তখন আর কি! আমাকে এখনি লইয়া চল, এখনি লইয়া চল—আমাকে বন্দী করিয়া লইয়া চল, আর বিলম্ব করিও না!”
মুক্তিয়ার খাঁ কহিল—“যুবরাজ, আমি ভুল বুঝি নাই। মহারাজ স্পষ্ট আদেশ করিয়াছেন।”
যুবরাজ অধীর হইয়া কহিলেন—“তুমি নিশ্চয়ই ভুল বুঝিয়াছ। তাঁহার অভিপ্রায় এরূপ নহে। আচ্ছা, চল, যশােহরে চল। আমি মহারাজার সম্মুখে তােমাদের বুঝাইয়া দিব, তিনি যদি দ্বিতীয় বার আদেশ করেন, তবে আদেশ সম্পন্ন করিও!”
মুক্তিয়ার যােড়হস্তে কহিল, “যুবরাজ, মার্জ্জনা করুন, তাহা পারিব না!”
যুবরাজ অধিকতর অধীর হইয়া কহিলেন, “মুক্তিয়ার, মনে আছে, আমি এক কালে সিংহাসন পাইব। আমার কথা রাখ, আমাকে সন্তুষ্ট কর!”