পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

রাজত্ব নাই। এখানে রাজা ছাড়া আর বাকী সকলেই রাজা নহে। অতএব আমাকে তুমি প্রজার ভয় দেখাইও না। যদি কোন প্রজা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন কথা কহে, তবে তাহার জিহ্বা তপ্ত লৌহ দিয়া পুড়াইব।”

 মন্ত্রী মনে মনে হাসিলেন। মনে মনে কহিলেন, “প্রজার জিহ্বাকে এত ভয়। তথাপি মনকে প্রবোধ দিয়া থাকেন যে, কোন প্রজাকে ডরাই না!”

 প্রতাপাদিত্য। “শ্রাদ্ধ শান্তি শেষ করিয়া লোক জন লইয়া একবার রায়গড়ে যাইতে হইবে। আমি ছাড়া সেখানকার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী আর ত কাহাকেও দেখিতেছি না।”

 বৃদ্ধ বসন্তরায় ধীরে ধীরে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন—প্রতাপাদিত্য চমকিয়া পিছু হটিয়া গেলেন। সহসা তাঁহার মনে হইল, বুঝি উপদেবতা। অবাক্ হইয়া একটি কথাও বলিতে পারিলেন না। বসন্তরায় নিকটে গিয়া তাঁহার গায়ে হাত বুলাইয়া মৃদুস্বরে কহিলেন—“আমাকে কিসের ভয় প্রতাপ? আমি তোমার পিতৃব্য। তাহাতেও যদি বিশ্বাস না হয়, আমি বৃদ্ধ, তোমার অনিষ্ট করিতে পারি এমন শক্তি আমার নাই।”

 প্রতাপাদিত্যের চৈতন্য হইয়াছে, কিন্তু কথা বানাইয়া বলিতে তিনি নিতান্ত অপটু। নিরুত্তর হইয়া অবাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। পিতৃব্যকে প্রণাম করা পর্য্যন্ত হইল না।

 বসন্তরায় আবার ধীরে ধীরে কহিলেন—“প্রতাপ, একটা যাহা হয়, কথা কও। যদি দৈবাৎ এমন একটা কাজ করিয়া থাক, যাহাতে আমাকে দেখিয়া তোমার লজ্জা ও সঙ্কোচ উপস্থিত হয়, তবে তাহার জন্য ভাবিও না। আমি কোন কথা উত্থাপন করিব না। এস বৎস; দুই জনে একবার কোলাকুলি করি। আজ অনেক দিনের পর দেখা হইয়াছে; আর ত অধিক দিন দেখা হইবে না।”