বিভা তাড়াতাড়ি বসন্তরায়ের কাছে গিয়া বলিয়া উঠিল, “দাদামহাশয় —আমি তোমার পাকাচুল তুলিয়া দিই।”
সুরমা। “আমি বলি কি”—
বিভা। “শোননা দাদামহাশয়, তোমার—”
সুরমা। “বিভা চুপ কর্। আমি বলি কি, তুমি গিয়ে একবার—”
বিভা। “দাদামহাশয়, তোমার মাথায় পাকাচুল ছাড়া যে আর কিছুই নেই, তুলে দিলে সমস্ত মাথায় টাক্ পড়্বে!”
বসন্তরায়। “আমাকে যদি কথা শুনতে না দিস্ দিদি, আমাকে যদি বিরক্ত করিস্ তবে আমি রাগ হিন্দোল আলাপ করিব।”
বলিয়া তাঁহার ক্ষুদ্রায়তন সেতারটির কান মোচ্ড়াইতে আরম্ভ করিলেন। হিন্দোল রাগের উপর বিভার বিশেষ বিদ্বেষ ছিল।
বিভা বলিল, “কি সর্ব্বনাশ। তবে আমি পালাই বলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল।”
তখন সুরমা গম্ভীর হইয়া কহিল, “বিভা নীরব হইয়া দিনরাত্রি যে কষ্ট প্রাণের মধ্যে বহন করে তাহা জানিতে পারিলে বোধ করি মহারাজারও মনে দয়া হয়!”
“কেন! কেন! তাহার কি হয়েছে!” বলিয়া নিতান্ত আগ্রহের সহিত বসন্তরায় সুরমার কাছে গিয়া বসিলেন।
সুরমা কহিল, “বৎসরের মধ্যে একটি দিন ঠাকুরজামাইকে নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইতেও কাহারো মনে পড়ে না?”
বসন্তরায় চিন্তা করিয়া কহিবেন, “ঠিক্ কথাই ত!”
সুরমা কহিল, “স্বামীর প্রতি এ অনাদর কয়জন মেয়ে সহিতে পারে বল ত? বিভা ভাল মানুষ, তাই কাহাকেও কিছু বলে না, আপনার মনে লুকাইয়া কাঁদে।”