পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

যুবরাজ উদয়াদিত্য আসিয়া গভীর স্নেহপূর্ণ প্রশান্ত আনন্দের সহিত বিভার সলজ্জ হর্ষপূর্ণ মুখখানি দেখিলেন। বিভার হর্ষ দেখিয়া তাঁহার এমনি আনন্দ হইল যে, গৃহে গিয়া সস্নেহ মৃদু হাস্যে সুরমাকে চুম্বন। করিলেন।

 সুরমা জিজ্ঞাসা করিল, “কি?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন,—“কিছুই না!”

 এমন সময়ে বসন্তরায় জোর করিয়া বিভাকে টানিয়া ঘরের মধ্যে আনিয়া হাজির করিলেন। চিবুক ধরিয়া তাহার মুখ তুলিয়া ধরিয়া কহিলেন—“দেখ, দাদা, আজ একবার তােমাদের বিভার মুখখানি দেখ! সুরমা,—ও সুরমা, একবার দেখে যাও!” আনন্দে গদগদ হইয়া বৃদ্ধ হাসিতে লাগিলেন। বিভার মুখের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “আহ্লাদ হয় ত ভাল করেই হাস্ না ভাই, দেখি!”

“হাসিরে পায়ে ধরে রাখিবি কেমন করে,
হাসির সে প্রাণের সাধ ঐ অধরে খেলা করে!”

 বয়স যদি না যাইত ত আজ তাের ঐ মুখখানি দেখিয়া এই খানে পড়িতাম আর মরিতাম! হায়, হায়, মরিবার বয়স গিয়াছে! যৌবন কালে ঘড়ি ঘড়ি মরিতাম। বুড়া বয়সে রোগ না হইলে আর মরণ হয় না!”

 প্রতাপাদিত্যকে যখন তাঁহার শ্যালক আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “জামাই বাবাজিকে অভ্যর্থনা করিবার জন্য কে গিয়াছে?” তিনি কহিলেন “আমি কি জানি!” “আজ পথে অবশ্য আলাে দিতে হইবে?” নেত্র বিস্ফারিত করিয়া মহারাজা কহিলেন “অবশ্যই দিতে হইবে, এমন কোন কথা নাই!” তখন রাজশ্যালক সসঙ্কোচে কহিলেন, “নহবৎ বসিবে না কি?” “সে সকল বিষয় ভাবিবার অবসর নাই।” আসল কথা, বাজনা বাজাইয়া একটা জামাই ঘরে আনা প্রতাপাদিত্যের কার্য্য নহে।

 রামচন্দ্র রায়ের মহা অভিমান উপস্থিত হইয়াছে। তিনি স্থির