পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৭১

লােক, তােকে আর অধিক কি শাস্তি দিব—যদি এ যাত্রা বাঁচিয়া যাই, তবে তাের মুখ আর আমি দেখিব না।” বলিতে বলিতে রামচন্দ্রের কণ্ঠরােধ হইয়া আসিল। তিনি যথার্থ ই রামমােহনকে ভাল বাসিতেন, শিশুকাল হইতে রামমােহন তাঁহাকে পালন করিয়া আসিতেছে।

 রামমােহন যোড় হাত করিয়া কহিল “তুমি আমাকে ছাড়াইবার কে মহারাজ? আমার এ চাকরি ভগবান্ দিয়াছেন। যে দিন যমের তলব পড়িবে, সে দিন ভগবান আমার এ চাকরি ছাড়াইবেন। তুমি আমাকে রাখ না রাখ আমি তােমার চাকর।” বলিয়া সে রামচন্দ্রকে আগলাইয়া দাঁড়াইল।

 উদয়াদিত্য কহিলেন—“রামমােহন, কি উপায় করিলে?” রামমােহন কহিল, “আপনার শ্রীচরণাশীর্বাদে এই লাঠিই উপায়। আর মা কালীর চরণ ভরসা।”

 উদয়াদিত্য ঘাড় নাড়িয়া কহিলেন—“ও উপায় কোন কাজের নয়। আচ্ছ, রামমােহন তােমাদের নৌকা কোন্ দিকে আছে?”

 রামমােহন কহিল, “রাজবাটির দক্ষিণ পার্শ্বের খালে।”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “চল একবার ছাদে যাই।”

 রামমােহনের মাথায় হঠাৎ একটা উপায় উদ্ভাবিত হইল—সে কহিল, “হাঁ, ঠিক কথা, সেই খানে চলুন।”

 সকলে প্রাসাদের ছাদে উঠিলেন। ছাদ হইতে প্রায় ৭০ হাত নীচে খাল। সেই খালে রামচন্দ্রের চৌষট্টি দাঁড়ের নৌকা ভাসিতেছে। রামমােহন কহিল, রামচন্দ্র রায়কে পিঠে বাঁধিয়া লইয়া সে সেই খানে ঝাঁপাইয়া পড়িবে।

 বসন্তরায় তাড়াতাড়ি শশব্যস্ত হইয়া রামমােহনকে ধরিয়া বলিয়া উঠিলেন—“না, না, না, সে কি হয়? রামমােহন তুমি অমন অসম্ভব কাজ করিতে যাইও না।”