পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৭৩

গেলেন। সুরমা উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া কহিল, “এখন তোমার কি হইবে?” উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমার জন্য আমি ভাবি না।”

 এদিকে নৌকা খানিক দূর গিয়া আটক পড়িল। বড় বড় শাল কাঠে খাল বন্ধ! এমন সময়ে সহসা প্রহরীরা দূর হইতে দেখিল, নৌকা পালাইয়া যায়। পাথর ছুঁড়িতে আরম্ভ করিল, একটাও গিয়া পৌঁছিল না। প্রহরীদের হাতে তলোয়ার ছিল, বন্দুক ছিল না। একজন বন্দুক আনিতে গেল। খোঁজ খোঁজ করিয়া বন্দুক জুটিল ত চকমকি জুটিল না —“ওরে বারুদ কোথায়—গুলি কোথায়” করিতে করিতে রামমোহন ও অনুচরগণ কাঠের উপর দিয়া নৌকা টানিয়া তুলিয়া লইয়া গেল। প্রহরিগণ অনুসরণ করিবার জন্য একটা নৌকা ডাকিতে গেল। যাহার উপরে নৌকা ডাকিবার ভার পড়িল, পথের মধ্যে সে হরিমুদীর দোকানে এক ছিলিম তামাক খাইয়া লইল ও রামশঙ্করকে তাহার বিছানা হইতে উঠাইয়া তাহার পাওনা টাকা শীঘ্র পাইবার জন্য তাগাদা করিয়া গেল। যখন নৌকার প্রয়োজন একেবারে ফুরাইল তখন হাঁক ডাক করিতে করিতে নৌকা আসিল। বিলম্ব দেখিয়া সকলে নৌকা-আহ্বানকারীকে সুদীর্ঘ ভর্ৎসনা করিতে আরম্ভ করিল। সে কহিল, “আমি ত আর ঘোড়া নই!” একে একে সকলের যখন ভর্ৎসনা করা ফুরাইল, তখন তাহাদের চৈতন্য হইল যে, নৌকা ধরিবার আর কোন সম্ভাবনা নাই। নৌকা আনিতে যে বিলম্ব হইয়াছিল ভর্ৎসনা করিতে তাহার তিন গুণ বিলম্ব হইল। যখন রামচন্দ্রের নৌকা ভৈরব নদে গিয়া পৌঁছিল তখন ফর্ণাণ্ডিজ এক তোপের আওয়াজ করিল। প্রত্যুষে প্রতাপাদিত্যের নিদ্রাকর্ষণ হইয়াছিল। সেই তোপের শব্দে সহসা ঘুম ভাঙিয়া গেল। তিনি ডাকিয়া উঠিলেন “প্রহরি!” কেহই আসিল না। দ্বারের প্রহরিগণ সেই রাত্রেই পালাইয়া গেছে। প্রতাপাদিত্য উচ্চতর স্বরে ডাকিলেন—“প্রহরি!”