পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রত্নতত্ত্ব
১৩

নতশির, সেই ভারতের সাহিত্য হইতে অক্সিজেন্ বাষ্পের নাম পর্য্যন্ত যে লুপ্ত হইয়াছে, সর্ব্বসংহারক যবনের উপদ্রবই যদি তাহার কারণ না হয়, তবে হে ভাই বাঙ্গালি, তাহার কী কারণ আছে জিজ্ঞাসা করি?

 তৃতীয় যুক্তি এই যে, ইতিহাসের দ্বারা সম্পূর্ণ প্রমাণ হইয়া গিয়াছে যে, যবনেরা প্রাচীন ভারতের বহুতর কীর্ত্তি লােপ করিয়াছে। এ কথা আজ কেহই অস্বীকার করিতে পারিবেন না। আজ যে আমরা নিন্দিত অপমানিত ভীত ত্রস্ত ভয়গ্রস্ত রিক্তহস্ত অস্তমিত-মহিমা পরাধীন হইয়াছি, ভারতে যবনাধিকারই তাহার একমাত্র কারণ।― এতটা দূরই যদি স্বীকার করিতে পারিলাম, তবে আমাদের গ্যাল্‌ভ্যানিক ব্যাটারি ও অক্সিজেনের নামও যে সেই দুরাত্মারাই লােপ করিয়াছে, এটুকু যােগ করিয়া দিতে কুণ্ঠিত হইবার তিলমাত্র কারণ দেখি না।

 চতুর্থ যুক্তি—যখন একসময়ে যবন ভারত অধিকার করিয়াছিল এবং নির্ব্বিচারে বহুতর পূত মস্তক ও মন্দিরচূড়া ভগ্ন করিয়াছিল, যখন অনায়াসে যবনের স্কন্ধে সমস্ত দোষারােপ করা যাইতে পারে এবং সে জন্য কেহ লাইবেলের মকদ্দমা আনিবে না, তখন যে ব্যক্তি সভ্যতার কোনো উপকরণ সম্বন্ধে প্রাচীন ভারতের দৈন্য স্বীকার করে, সে পাষণ্ড হৃদয়হীন, বিকৃত-মস্তিষ্ক এবং স্বদেশদ্রোহী। অতএব, তাহার কথায় কোনো মূল্য থাকিতে পারে না; সে যে-সকল প্রমাণ আহরণ করে, কোনো প্রকৃত নিষ্ঠাবান ধর্ম্মপ্রাণ হিন্দুসন্তান তাহাকে প্রমাণ বলিয়া গণ্য করিতেই পারেন না।

 এমন যুক্তি আমরা আরাে অনেক দিতে পারি। কিন্তু আমরা হিন্দু, পৃথিবীতে আমাদের মতো উদার, আমাদের মতাে সহিষ্ণু জাতি আর নাই। আমরা পরের মতের উপর কোনো হস্তক্ষেপ করিতে চাহি না। অতএব আমাদের সর্ব্বপ্রধান যুক্তি, বাপান্ত, অর্দ্ধচন্দ্র এবং ধােপা-নাপিত-রােধ।

১২৯৮।