পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিনিপয়সায় ভােজ
৩৫

 দেবী কহিলেন,“অন্যান্য নানা কার্য্যের মধ্যে বালকদিগকে শিক্ষাদানের ভার এতোদিন আমার উপর ছিল,কিন্তু সে কার্য্য আমি কিছুতেই চালাইতে পারিব না। আমি রমণী,আমার মাতৃহৃদয়ে শিশুদিগের প্রতি কিছু দয়ামায়া আছে—তাহাদের পাঠের জন্য আজকাল যে সকল পুস্তক নির্ব্বাচিত হয়, সে আমি কিছুতেই পড়াইতে পারিব না। আমার হৃদয় বিদীর্ণ হয়। এবং তাহাদের ক্ষুদ্র শক্তি ভাঙিয়া পড়ে। এ নিষ্ঠুর কার্য্য একজন বলিষ্ঠ পুরুষের প্রতি অর্পিত হইলেই ভালো হয়। অতএব সুরসভায় আমি সানুনয়ে প্রার্থনা করি, যমরাজের প্রতি উক্ত ভার দেওয়া হৌক্।”

 যমরাজ তৎক্ষণাৎ উঠিয়া প্রতিবাদ করিলেন, আমাকে কোনাে প্রয়ােজন নাই, কারণ, ইস্কুলের মাষ্টার এবং ইন্‌স্পেক্টর আছে।

 শিশুশিক্ষা বিভাগে যমরাজের বিশেষ নিয়ােগ যে বাহুল্য, এ সম্বন্ধে দেবতাদের কোনাে মতভেদ রহিল না।

বিনিপয়সায় ভােজ

 আপিসের বেশে অক্ষয় বাবু।

 (হাসিতে হাসিতে) আজ আচ্ছা জব্দ ক’রেচি। বাবু রােজ আমাদের স্কন্ধে বিনামূল্যে বিনামাশুলে ইয়ার্কি দিয়ে বেড়ান, আর লম্বা চওড়া কথা কন্! মশায়, আজ বছর খানেক ধ’রে রােজ বলে আজ খাওয়াবাে,কাল খাওয়াবাে,খাওয়াবার নাম নেই! যতােখানি আশা দিয়েছে তা’র শিকি পরিমাণ যদি আহার দিত তা হ’লে এতোদিনে তিনটে রাজসূয় যজ্ঞ হ’তে পা’র্‌তাে। যা হােক্ আজ তো বহু কষ্টে একটা নিমন্ত্রণ আদায় করা গেছে। কিন্তু দুটি ঘণ্টা ব’সে আছি এখনাে তার দেখা নেই।