পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অরসিকের স্বর্গপ্রাপ্তি
৫৯

লাগে, কিন্তু ভালো লাগ্‌বার কোনো নিয়ম নেই। আমাদের ঠিক তা’র উল্টো, ভালাে না লাগ্‌তে পারে কিন্তু নিয়মটা থাক্‌বেই। আপনাদের স্বর্গে যেটি আবশ্যক সেটি নেই, যেটা না হ’লেও চলে তা’র অনেক বাহুল্য। সমস্ত সপ্তস্বর্গ খুঁজে কায়ক্লেশে যদি আধখানা নিয়ম পাওয়া যায় তো তখনি তা’র হাজারখানা ব্যতিক্রম বেরিয়ে পড়ে। সকল বিষয়েই তাই দেখ্‌চি। ঐ দেখুন না ষড়ানন ব’সে আছেন—ওঁর ছ-টার মধ্যে পাঁচটা মুণ্ডুর কোনােই অর্থ পাবার জো নেই। শরীরতত্ত্বের কখও যে জানে সে-ও ব’লে দিতে পারে একটা স্কন্ধের উপরে ছ-টা মুণ্ড নিতান্তই বাহুল্য!-হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ! ওঁর ছয় মাতার স্তন পান ক’র্‌তে ওঁকে ছ-টা মুণ্ড ধারণ ক’র্‌তে হ’য়েছিলো? ওটা হ’লো মাইথলজি আমি ফিজিয়লজির কথা ব’ল্‌ছিলুম। ছ-টা যেন মুণ্ডই ধারণ ক’র্‌লেন— পাকযন্ত্র তাে একটার বেশি ছিল না।—এই দেখুন না, আপনাদের স্বর্গের বন্দোবস্তটা। আপনার শরীর থেকে ছায়াটাকে বাদ দিয়ে দিয়েচেন—কিন্তু সেটা আপনাদের কী অপরাধ ক’রেছিলো? আপনারা স্বর্গের লােক—ব’ল্লে হয়তাে বিশ্বাস করেন না, আমি জন্মকাল থেকে মৃত্যুকাল পর্য্য‌ন্ত ঐ ছায়াটাকে কখনো পশ্চাতে, কখনো সম্মুখে, কখনো দক্ষিণে, কখনো বামে সঙ্গে ক’রে নিয়ে কাটিয়েচি, ওটাকে পুষতে একদিনের জন্যে শিকিপয়সা খরচ ক’র্‌তে হয়নি এবং অত্যন্ত শ্রান্তির সময়ও বহন ক’র্‌তে এক তিল ভার বােধ করিনি—ওটাকে আপনারা ছেঁচে দিলেন, কিন্তু ছ-টা মুণ্ড, চারটে হাত, হাজারটা চোখ, এতে খরচও আছে, ভারও আছে—অথচ সেটা সম্বন্ধে একটু ইকনমি কর্‌বার দিকে নজর নেই। ছায়ার বেলাই টানাটানি কিন্তু কায়ার বেলা মুক্তহস্ত!— সাধুবাদ দিচ্চেন? দেবতাদের মধ্যে আপনিই তা হ’লে আমার কথাটা বুঝেচেন! সাধুবাদ আমাকে দিচ্চেন না? শ্রীমতী রম্ভাকে দিচ্চেন? ওঃ! তা হ’লে আপনি বসুন,আমি কার্তিকের সঙ্গে আলাপ ক’রে আসি।