পাতা:ব্রজবিলাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম উল্লাস।

তিনি আকাশের চাঁদ নহেন, নদিয়ার চাঁদ[১]। নদিয়ার চাঁদকে ধরিতে যাওয়া, আমার মত বেহুদা বাহাদুরের পক্ষে, নিতান্ত অসংসাহসিকের কার্য্য বলিয়া বোধ হয় না।

 এক সময়ে, চৈতন্য দেব, নদিয়ার চাঁদ বলিয়া, খ্যাত হইয়াছিলেন। বোধ হয়, তাঁর রঙটা বেস ফরসা ছিল, তাই তাঁকে নদিয়ার চাঁদ বলিত। যথার্থ গুণ প্রকাশ অনুসারে বলিতে গেলে, বিদ্যারত্ন খুড়ই নদিয়ার প্রকৃত চাঁদ। নদিয়ার চাঁদ, অর্থাৎ নদিয়া উজ্জ্বল করিয়াছেন। তাঁহার পূর্ব্বে, রঘুনাথ, জগদীশ, গদাধর, রঘুনন্দন প্রভৃতি নদিয়াকে যেমন উজ্জ্বল করিয়াছিলেন, শ্রীমান্ বিদ্যারত্ন খুড়, নিজগুণে, তদপেক্ষা শত সহস্র গুণে, অধিক উজ্জ্বল করিয়াছেন। বলিতে কি, খুড় যে এত বড় ভাগ্যধর হইবেন, ইহা, ক্ষণ কালের জন্যে, আমাদের কাহারও খেয়ালে আইসে নাই।


  1. আমি এ স্থলে, শ্রীমান ব্রজনাথ বিদ্যারত্নকে নদিয়ার চাঁদ বলিলাম। কিন্তু, শ্রীমতী যশোহরহিন্দুধর্ম্মরক্ষিণী সভা দেরী, ইতিপুর্ব্বে, শ্রীমান্ ভুবনমোহন বিদ্যারত্নকে নবদ্বীপচন্দ্র অর্থাৎ নদিয়ার চাঁদ বলিয়াছেন। উভয়েই বিদ্যারত্ন উপাধিধারী, উভয়েই স্ব স্ব বিষয়ে সর্ব্বপ্রধান বলিয়া গণ্য, বিদ্যা বুদ্ধির দৌড়ও উভয়ের একই ধরণের। সুতরাং, উভয়েই নবদ্বীপচন্দ্র অর্থাৎ নদিয়ার চাঁদ বলিয়া প্রতিষ্ঠিত হইবার যোগ্য পাত্র, সে বিষয়ে সংশয় নাই। কিন্তু, এ পর্যন্ত, এক সময়ে, দুই চাঁদ দেখা যায় নাই। সুতরাং, এক জন বই, দুজনের নদিয়ার চাঁদ হইবার সন্তাবনা নাই। কিন্তু, উভয়ের মধ্যে, এক জন এক বারেই বঞ্চিত হইবেন, সেটাও ভলি দেখায় না; এবং, ঐ উপলক্ষে, দুজনে হুড়হুড়ি ও গুঁতগুঁতি করিয়া মরিবেন, সেটাও ভাল দেখায় না। এ জন্য, আমার বিবেচনায়, সমাংশ করিয়া, দুজনকেই, এক এক অর্দ্ধচন্দ্র দিয়া, সন্তুষ্ট করিয়া, বিদায় করা উচিত। শ্রীমঙী যশোহর হিন্দুধর্ম্মরক্ষণী সভা দেবী আমার এই পক্ষপাতবিহীন কয়তা ঘাড় পাতিয়া লইলে, আর কোনও গোলযোগ বা বিবাদ বিসংবাদ থাকে না। এক্ষণে, তাঁর যেরূপ মরজি হয়।