বিবেচিত হওয়া উচিত মহে। এজন্যই, গোপকুলোদ্ভব ভগবান্ দেবকীনন্দন স্বীয় প্রিয়বান্ধব তৃতীয় পাণ্ডব অর্জ্জুনকে,
জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তন্মাদপরিহার্য্যেঽর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি[১]॥
জন্মিলেই মৃত্যু অবধারিত, মৃত্যু হইলেই পুনর্জ্জন্ম অবধারিত। অতএব, অপরিহার্য্য বিষয়ে, তোমার শোক করা উচিত নহে।
এই সারগর্ভ উপদেশ দিয়াছিলেন। সেইরূপ,
জারাশ্রয়ে ধ্রুবো ভ্রূণো ভ্রূণে হত্যা ধ্রুবী স্মৃতা।
তস্মাদপরিহার্য্যেঽর্ধে ন দোষঃ সাঁধুসংসদি[২]॥
উপপতির আশ্রয়গ্রহণে, ভ্রূণসঞ্চার অবধারিত; ভ্রূণসঞ্চার হইলে, ভ্রূণহত্যাও অবধারিত। অতএব, অপরিহার্য্য বিষয়ে, সাধুসমাজে দোষ নাই।
বস্তুতঃ, সূক্ষ্ম বিবেচনা করিয়া দেখিলে, ভ্রূণহত্যায় কোনও দোষ আছে, এরূপ প্রতীতি হয় না। ভ্রূণহত্যাকে পাপজনক, বা কোনও অংশে নিন্দনীয়, বলিয়া প্রতিপন্ন করিতে পারেন, কই, এমন বেটা ছেলে ত, এ পর্যন্ত, আমাদের দিব্য চক্ষে ঠেকে নাই। পেট ফাঁপিলে, ও পেটে মল জমিলে, ডাক্তরেরা, জোলাপ দিয়া, পেট পরিষ্কার
- ↑ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ২। ২৭।
- ↑ ধর্ম্মনির্ব্বাণ তন্ত্র ৩। ৭। ২১।
লজ্জাশীল; অতঃকরণে দূরভিলাষের উদয় হইলেও, তাঁহারা, লজ্জার খাতিরে, মুখ ফুটিয়া বলিতে পারেন না। তাহারা, স্বয়ম্প্রবৃত্ত হইয়া, ধর্ম্মভ্রষ্ট হইয়াছেন, এরূপ দৃষ্টান্ত অতিবিরল। কিন্তু, নিরতিশয় আক্ষেপের বিষয় এই পুরুষজাতির প্রবর্ত্তনাপরতন্ত্র হইয়া, এক বার অপথে পদার্পণ করিলে, লজ্জাভঙ্গ হইয়া যায়; একবার লজ্জাভঙ্গ হইলে, আর রক্ষা নাই। তখন,
“খুলিল মনের দ্বার না লাগে কপাট”।
সরিশেষ অভিনিবেশ সহকারে, অনুসন্ধান ও অনুধাবন করিয়া দেখিলে, ভয়ানক স্বার্থপর পুরুষজাতির অনিবার্য্য দুষ্প্রবৃত্তির আতিশয্যই স্ত্রীলোকের চরিত্রদোষের মূলকারণ বলিয়া স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।