পাতা:ব্রজবিলাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিজ্ঞাপন।

তুখড় ইয়ার, সব নরকে যাইবেন। যত মৃদুভাষিণী, চারুহাসিনী, বারবিলাসিনী, সব নরকে যাইবেন; স্বর্গে যাইবার মধ্যে, কেবল আপনাদের মত টিকিকাটা বিদ্যাবাগীশের পাল। সুতরাং, অতঃপর নরকই গুল‍্জার এবং, নরকে যাওয়াই সর্ব্বাংশে বাঞ্ছনীয়। আমারও সেই উত্তর।

 কিন্তু, একটি বিষয়ে, উক্ত ভদ্রসন্তানের মতের সহিত, আমার মতের সম্পূর্ণ বৈলক্ষণ্য আছে। তিনি কহিয়াছিলেন, টিকিকাটা বিদ্যাবাগীশের পাল স্বর্গে যাইবেন। আমার কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস এই, যদি নরক নামে বাস্তবিক কোনও স্থান থাকে। এবং, কাহারও পক্ষে, সেই নরকপদবাচ্য স্থানে যাইবার ব্যবস্থা থাকে; তাহা হইলে, টিকিকাটা বিদ্যাবাগীশের পাল সর্ব্বাগ্রে নরকে যাইবেন, এবং নরকের সকল জায়গা দখল করিয়া ফেলিবেন; আমরা আর সেখানে স্থান পাইব না।

 শ্রীমান্ বিদ্যাবাগীশ খুড় মহাশয়েরা, শাস্ত্রের দোহাই দিয়া, মনগড়া বচন পড়িয়া, বলিয়া থাকেন, জ্ঞানকৃত পাপের নিষ্কৃতি নাই। বিষয়ী লোক শাস্ত্রজ্ঞ নহেন; সুতরাং, তাঁহাদের অধিকাংশ পাপ, জ্ঞানকৃত বলিয়া, পরিগণিত হইতে পারে না। কিন্তু, বিদ্যাবাগীশ খুড়দের, শাস্ত্রেও যেমন দখল, পাপেও তেমনই প্রবৃত্তি। সুতরাং, তাঁহাদের পাপের সংখ্যাও অধিক, এবং সমস্ত পাপই জ্ঞানকৃত। এমন স্থলে, তাঁহারাই নরক একচাটিয়া করিয়া ফেলিবেন, সে বিষয়ে অনুমাত্র সংশয় নাই। তাঁহারা, আমাদিগকে ভয় দেখাইবার জন্যে, নানা রঙ্ চড়াইয়া, বর্ণনা করিয়া, নরককে এমন ভয়ানক স্থান করিয়া তুলেন যে, শুনিলে হৃৎকম্প হয়, এবং, এক বারে হতাশ হইয়া পড়িতে হয়। কিন্তু, আপনাদের বেলায়, ‘মাকড় মারিলে থোকড় হয়’ বলিয়া, অবলীলা ক্রমে, সমস্ত পাপকর্ম্মে সম্পূর্ণ লিপ্ত হইয়া থাকেন। এ বিষরের অতি সুন্দর একটি উদাহরণ দর্শিত হইতেছে।