পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
অষ্টম উপদেশ।

শরীর সেবায় প্রবৃত্ত হইতেছি। অশন বসন সুখ-স্বাচ্ছন্দতা পাইবার নিমিত্তে লোকে যে এত কষ্ট সহ্য করিতেছে, ধর্ম্মতঃ বিবেচনা করিতে গেলে তাহাতে তাহাদের কিছু মাত্র গৌরব নাই। কিন্তু যদি আমাদের এমন এক সময় উপস্থিত হয়, যখন আমরা বিপদে একান্তু আক্রান্ত হই— শোকেতে ব্যাকুল মতি হই—আপনার প্রতি আর কিছু মাত্র আদর থাকে না; মৃত্যুই আমাদের প্রার্থনীয় হইয়া পড়ে। এমন অবস্থায় যদি আমরা আমাদের সমুদয় বল একত্র করিয়া কেবল ধর্ম্মের জন্য কর্তব্যের জন্য আত্ম রক্ষা করি; সেই স্থলেই আমাদের ধর্ম্ম-বল প্রকাশ পায়। এই প্রকার আমরা ধর্ম্ম হইতে হিতৈষণার আদেশ পাইতেছি এবং আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হইতেও অন্যের প্রতি প্রেম দয়া, করুণা বিস্তার করিতেছি। কিন্তু মাতা যে তাঁহার পুত্রকে স্নেহ করেন, স্বামী যে তাহার স্ত্রীকে প্রীতি করেন, দরিদ্রের দুঃখ দেখিয়া যে কোন ব্যক্তি দয়া অনুভব করেন; তাহাতে তাঁহারদিগের ধর্ম্ম-গৌরব কি? সংগ্রাম স্থলেই ধর্ম্মের মাহাত্ম্য প্রকাশ পায়। আমরা যখন আপনার সুখ স্বচ্ছন্দতা বিসর্জ্জন করিয়া নিরাহারী নিরাশ্রয়কে অন্ন বস্ত্র প্রদান করি—যখন আমরা সমুদয় কষ্ট সহ্য করিয়া সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা সহকারে আমাদের কোন চির পালিত মন্দ অভ্যাসকে পরিত্যাগ করি-যখন শত্রুকে প্রেম দ্বারা পরাজয় করি, অসাধুকে সাধুতাতে ক্রয় করি—যখন ধর্ম্মের জন্য প্রাণের আশঙ্কও পরিত্যাগ করি; তখনই আমাদের প্রকৃত মহত্ত্ব; তখনই আমাদের কর্ত্তৃত্ব প্রকাশ পায়;