পাতা:ভগ্নহৃদয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রথম সৰ্গ।
১৫

অতি ধীরে বহে শ্বাস, নয়নেতে পলক না নড়ে।
* * * *
প্রাণের সমুদ্র এক আছে যেন এ দেহ মাঝারে,
মহা উচ্ছ্বাসের সিন্ধু রুদ্ধ এই ক্ষুদ্র কারাগারে;
মনের এ রুদ্ধস্রোত দেহ খানা করি বিদারিত
সমস্ত জগৎ যেন চাহে সখি করিতে প্লাবিত!
অনন্ত আকাশ যদি হ’ত এ মনের ক্রীড়া-স্থল,
অগণ্য তারাকারাশি হ’ত তার খেলেনা কেবল,
চৌদিকে দিগন্ত আসি রুধিত না অনন্ত আকাশ,
প্রকৃতি জননী নিজে পড়াত কালের ইতিহাস,
দুরন্ত এ মন-শিশু প্রকৃতির স্তন্ত-পান করি
আনন্দ-সঙ্গীত স্রোতে ফেলিত গো শুন্যতল ভরি,
উষার কনক-স্রোতে প্রতিদিন করিত সে স্নান,
জ্যোছনা-মদিরা ধারা পূর্ণিমায় করিত সে পান,
ঘূর্ণ্যমান ঝটিকার মেঘমাঝে বসিয়া একেলা
কৌতুকে দেখিত যত বিদ্যুত-বালিকাদের খেলা,
দুরন্ত ঝটিকা হোথা এলোচুলে বেড়াত নাচিয়া
তরঙ্গের শিরে শিরে অধীর-চরণ বিক্ষেপিয়া।
হরষে বসিত গিয়া ধূমকেতু পাখার উপরে
তপনের চারিদিকে ভ্রমিত সে বর্ষ বর্ষ ধোরে |
চরাচর মুক্ত তার অবারিত বাসনার কাছে,
প্রকৃতি দেখাত তারে যেথা তার যত ধন আছে;
কুসুমের রেণুমাখা বসন্তের পাখায় চড়িয়া
পৃথিবীর ফুলবনে ভ্রমিত সে উড়িয়া উড়িয়া;