পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অবধী সাহিত্য দয়াশংকর দীক্ষিত ( ছদ্মনাম ‘দেহাতী’ ) ইহাদের পশ্চাতে স্ত্রী-পুরুষ আরও অনেকে। বিশাল হিন্দী অঞ্চলের বিভিন্ন উপভাষাসমূহের মধ্যে অবধী আজ পর্যন্ত সর্বাধিক সাহিত্যমর্যাদার অধিকারী বলা যাইতে পারে। এই প্রসঙ্গে স্মরণ রাখা প্রয়ােজন, অবধী সাহিত্যের লেখকবৃন্দ হিন্দী সাহিত্য হইতে বিযুক্ত নহেন; তাহাদের কেহ কেহ একই। সঙ্গে উভয় সাহিত্যের চর্চা করিয়া আসিতেছেন। | হিন্দী সাহিত্যের তুলনায় অবধী সাহিত্যের ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্য স্বভাবতই কম। ইহাতে নাটক ও প্রহসন জাতীয় রচনা কিছু কিছু থাকিলেও ইহা মুখ্যতঃ কাব্যসাহিত্য ; এবং ইহার মূল উপজীব্য পল্লী ও পল্লী-জীবন। লখনউ বেতার-কেন্দ্রের ‘পঞ্চায়েৎঘর’ নামক পল্লীমঙ্গল-আসরের সঞ্চালক চন্দ্রভূষণ ত্রিবেদী ( যিনি ‘রমই কাকা’ নামে পরিচিত ) পল্লী সম্পর্কিত নানাবিধ রচনায় প্রসিদ্ধি অর্জন করিয়াছেন। | পল্লীর কৃষক, খেত-খামার, নদী-প্রান্তর, বর্ষা-বসন্ত, গ্রাম্য মেয়ে, দাম্পত্য-চিত্র, পারিবারিক জীবন ইত্যাদি লােকসাহিত্যের বিভিন্ন উপকরণ লইয়া অবধী সাহিত্য গড়িয়া উঠিয়াছে। প্রকৃতপক্ষে লােকসংগীত ও লােকসাহিত্যই অবধীর প্রধান গৌরব। ইহার ইতিহাস বিশেষ প্রাচীন এবং পুরুষ-পরম্পরায় সেই প্রাচীন ধারা যুগােচিত কিঞ্চিৎ পরিবর্তনসহ বর্তমান যুগের কবিদের মধ্যেও বজায় রহিয়াছে। বিষয় অনুসারে অবধী লােকসংগীতসমূহকে নিম্নলিখিত রূপে শ্রেণীবদ্ধ করা যাইতে পারে নহছ, বা নাখুর ( নখক্ষৌর ), বিবাহের গীত, চৌমাসা, বারহমাস, বর্ষা-বসন্ত প্রভৃতি ঋতু সম্বন্ধীয় গান, সােহর (পুত্রজন্ম সম্বন্ধীয় গীত), ছঠী (ষষ্ঠ রাত্রি ), পসনী ( অন্নপ্রাশনের গান ), চকীর গান, হােলী ইত্যাদি।

অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন গীতসমূহে কলিকাতা, বােম্বাই প্রভৃতির উল্লেখ যে ভাবে পাওয়া যায়, তাহা হইতে এই সমস্ত শহরের ঐশ্বর্য, বিলাস ও প্রলােভন সম্পর্কে সুদূরবর্তিনী পল্লীনারীদের মনােভাবটুকু বেশ বােঝা যায়। ষষ্ঠ রাত্রির গীতে নবজাত শিশুকে উপলক্ষ করিয়া প্রতিবেশিনীদের একটি গানে পাই— উহার দাদু হইল কলিকাতার রাজা, সে যখন হাতিতে চড়িয়া আসিবে তখন দুয়ারে নহবত বাজিতে থাকিবে। কাকা বােম্বাই-এর রাজা, সে আসিবে ঘােড়ায় চড়িয়া। বাবা দিল্লীর রাজা, সে আসিবে মােটরে। অন্য সমস্ত স্বজন কানপুর, লখনউ প্রভৃতির রাজা তাহারা কেহ আসিবে সাইকেলে চড়িয়া, কেহ বা গাধার পিঠে ইত্যাদি। অপর একটি গানে বিবাহের

________________

অবধী সাহিত্য পরে স্ত্রী স্বামীকে যাহা বলিতেছে, তাহার মর্মার্থ এইরূপ -হে প্রিয়, তুমি আমার জন্য একখানি ফুল-কাটা শাড়ি আনিয়া দিও। কিন্তু মিনতি আমার, তুমি কলিকাতা যাইও না, বােম্বাই যাইও না, লখনউ হইতে আনিয়া দিলেই চলিবে। | উল্লিখিত উদাহরণগুলি নিতান্তই লােকসাহিত্যের | অস্তভুক্ত; ইহার রচয়িতাদের নাম পর্যন্ত জানিবার উপায় নাই। আধুনিক যুগের কবিরাও মুখ্যতঃ সেই পল্লীজীবনকে আশ্রয় করিয়াছেন। পল্লীবালার চিত্র অঙ্কনে বলভদ্র দীক্ষিত (পঢ়ীস ) বলিতেছেন : কাশফুলের মত তাহার চেহারা; কেঁকড়ানাে চুল আসিয়া মুখের উপর চুমু খাইতেছে। বাছুরকে সে আদর করে ; খিল খিল করিয়া হাসে- যেন বালুকারাশির উপর প্রভাতের আলাে আসিয়া পড়িয়াছে। পশু-পাখির সঙ্গে মিলিয়া মিশিয়া বনে বনে সে মঙ্গলগীত গাহিয়া বেড়ায় গরীব কিসানের বিটিয়া। ইহারই মধ্যে আবার নূতন সুর শােনা যায় কোনও কোনও কবির কণ্ঠে। কিসানশংকর’ কবিতায় মৃগেশ দেখিয়াছেন মহাদেবের সহিত কৃষকের সাদৃশ্য। কবি বলিতেছেন : আমিও কিসান, তুমিও কিসান,ঘরবাড়ি আমারও নাই, তােমারও নাই...আমরা উভয়ে ধূলিমাখা হইয়া ঘুরিয়া বেড়াই। তুমি মাখাে শ্মশানের ছাই, আমি মাখি খেতের ধূলি।।

ব্যঙ্গরসাত্মক কবিতাও আধুনিক অবধী সাহিত্যে কিছু কিছু পাওয়া যায়। কান্যকুজের ব্রাহ্মণসমাজের মর্যাদা ভারতপ্রসিদ্ধ। আধুনিক অবধী কবি ‘পঢ়ীস’ সেই কনৌজী ব্রাহ্মণদের অধঃপতিত মিথ্যা মর্যাদাকে আঘাত দিতে গিয়া বলিয়াছেন : হম কনউজিয়া বামন আহিন— আমরা হইলাম কনৌজী ব্রাহ্মণ। ঘরে পুত্র, কন্যা ও পুত্রবধূদের লইয়া পরিবারটি নিতান্ত ছােট নয়। ভিক্ষা করিয়া সকলের পেট ভরাইতে হয়। বত্রিশ বৎসরের অনূঢ়া কন্যা ঘরে রহিয়াছে, আর আছে আঠার বছরের পপৗত্রী; তবু উন্নত আমাদের মর্যাদার জয়-পতাকা। কারণ আমরা যে কনৌজী ব্রাহ্মণ। | মধ্যযুগের অবধীতে রামায়ণ লিখিয়া তুলসীদাস হিন্দীসাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় হইয়া আছেন। সে যুগের অবধীতে কোনও কৃষ্ণকাব্য রচিত হয় নাই। সেই অভাব পূরণ করিয়াছেন বর্তমান যুগের দ্বারকাপ্রসাদ মিশ্র হার সুবৃহৎ কৃষ্ণায়ন’ কাব্য রচনা করিয়া। তুলসীদাসের রামচরিতমানসের আদর্শে রচিত এই কৃষ্ণকাব্যখানি অবধী | সাহিত্যের সম্পদ বিশেষ।
৭৯