পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অগ্নিপূজা কেহ মনে করেন, ইহা পূর্ব ভারতে (বাংলা বা বিহারে ) খ্রষ্টীয় নবম শতাব্দীতে রচিত। H M. Winternitz, History of Indian Literature, vol. I. ; Haraprasad Sastri, Descriptive Catalogue of Sanskrit Manuscripts, Asiatic Society of Bengal, vol. V, Preface, 1928. চিন্তাহরণ চক্রবর্তী অগ্নিপূজা জড়বিজ্ঞানের দিক হইতে বলা চলে যে অম্লজান ( অক্সিজেন) এবং অঙ্গারের (কার্বন) সমবায়ে অগ্নির উৎপত্তি হয়। অগ্নি এবং আলােক তাহাদের শক্তি এবং ঔজ্জ্বল্যের কারণে আদিম মানবের নিকট রহস্যময় আকর্ষণের বস্তু ছিল। আদিম মানব আকাশের বিদ্যুৎ অথবা অরণ্যের দাবাগ্নিকে প্রথম দেখিয়াছিল। তাহার পর একদা ধাতু অথবা শিলাখণ্ডের সহিত প্রস্তরখণ্ডের আকস্মিক সংঘাতে সে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইতে দেখিতে পায়, অবশেষে কৌতূহলের বশবর্তী হইয়া সে ধাতু, প্রস্তর, এমন কি কাষ্ঠখণ্ডও ঘর্ষণ করিয়া অগ্নি উৎপাদনের কৌশল আবিষ্কার করে। নৃতত্ত্ববিগণ যাহাই বলুন না কেন অগ্নি উৎপাদনের কৌশল আবিষ্কার এবং অগ্নির সাহায্যে উষ্ণতা সম্পাদন, রন্ধনবিদ্যা এবং শিল্পাদি প্রচলনই যে আজিকার সভ্যজীবনযাত্রা গড়িয়া তুলিয়াছে তাহাই মানবের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। অগ্নির অসাধারণ উপযােগিতার কারণে পৃথিবীর সর্বত্রই মানুষ অগ্নিকে ভয়, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও পূজা করিতে আরম্ভ করে। (ক) ভারতীয় আর্য এবং ইরানীয়দিগের আদিপুরুষগণ ইওরেশিয়ার যে সমতল ভূখণ্ডে বাস করিতেন তাহা বৎসরের কতক সময় ব্যাপিয়া তীব্র শীতে আচ্ছন্ন থাকিত। এই জন্য শৈত্যনিবারণ, উষ্ণতাসাধন এবং হিংস্র জন্তু বিতাড়নাদি ব্যাপারে অগ্নি সংসারযাত্রার একটি অত্যাবশ্যক উপকরণরূপে গৃহীত হইয়াছিল। যাযাবর জাতির ন্যায় ইন্দো-ইওরােপীয় অথবা আর্যজাতি যখন যেখানে যাত্রা করিয়াছেন, তখনই তাহাদের আদি জন্মভূমিতে প্রচলিত অগ্নিকেন্দ্রিক সভ্যতা ও সংস্কৃতিকেও। সঙ্গে লইয়া গিয়াছেন। এইরূপে আর্যগণ নিজেদের অগ্নি এবং আলােকের সন্ততিরূপে বিশ্বাস করিয়া উষা, সূর্য, মিত্র, অগ্নি অথবা আতর-এর পূজা করিতে শিখিলেন। | গ্রীস, ইরান এবং ভারতবর্ষে যে সকল ভাষা ছড়াইয়া পড়িয়াছিল তাহা হইতে মূল ভাষার ( আদিম ইন্দোইওরােপীয় আনুমানিক ৩০ ০ ০ খ্রীষ্টপূর্ব ) অগ্নিদ্যোতক। শব্দটি এইভাবে আবিষ্কার করা যাইতে পারে

________________

অগ্নিপূজা | ইন্দো-ইওয়ােপীয় মূল : । দিব=দীপ্তি পাওয়া > ল্যাটিন ডিউস, সংস্কৃত দেব, আবেস্তীয় দইব = দীপ্তিমান দেবতা, জার্মান টিউ.Tiw, যেমন Tuesday; ইংরেজী ‘ডে’ শব্দ <daeg (প্রাচীন ইংরেজী )=সংস্কৃত ‘দাঘ’ অথবা ‘দাহ’, তুলনীয় নিদাঘ’ = গ্রীষ্মদিন ; ল্যাটিন atrium ‘আত্ৰিউ’= আবেস্তীয় ‘আতর’= অগ্নিস্থান বা বেদী ; ল্যাটিন ignis ‘ইগনিস’=সংস্কৃত ‘অগ্নি’=বালটিক। ogne ‘ওগনে’= স্লাভ oganu ‘ওগ’= আগুন। (খ) ইন্দো-ইরানীয় অগ্নি— অনার্য আদিবাসীদিগকে পরাস্ত করিয়া উত্তর ভারতে আর্যজাতির ভ্রমণ-অভিযান যখন সমাপ্ত হইল তখন তাহারা কৃষিজীবীরূপে এদেশে বসবাস আরম্ভ করিলেন। জাতীয় দেবতারূপে গৃহীত হইয়া। ইন্দ্র দান করিলেন বিজয়, সােম দিলেন উল্লাসবর্ধক পানীয়, | এবং স্বয়ং অগ্নি পশুযাগে ও অন্যবিধ যজ্ঞাদিতে উৎসর্গীকৃত বস্তুসমুদয় দেবতবর্গের নিকট প্রেরণ করিতে লাগিলেন। এইরূপে ভারতীয় আর্যগণের নিকট অগ্নি অতি প্রধান দেবতারূপে গৃহীত হইলেন- তাহার নাম হইল অসংখ্য | এবং বাস হইল ত্রিলােক ব্যাপিয়া। অসুরের জঠরে জন্ম লাভ করিয়া (অসুস্য জঠরা অজায়ত) অগ্নি দেবতাবর্গের | মুখ এবং জিহ্বারূপে পরিচয় লাভ করিলেন। তিনি অন্তরিক্ষে, তিনি ধরিত্রীগর্ভে, তিনি জীবজগতে, তিনি ঈশ্বর, পরিবারে তিনি গৃহপতি, তিনি যুগস্রষ্টা প্রভু, তিনি | জাতি ও সমাজে চক্রবর্তী। ইন্দো-ইরানীয়গণ ছিলেন মূলতঃই অগ্নি-উপাসক এবং তাঁহাদের সর্ববিধ কল্যাণের জন্য তাহারা অগ্নির সাহায্যে দেবগণের উদ্দেশ্যে বিস্তৃত ও জটিল পদ্ধতিতে যজ্ঞ ও উপাসনাদি করিতেন। ক্রমে যখন আর্যজাতি পাঞ্জাবে আসিলেন তখন অগ্নি দ্বারা মৃতদেহ পবিত্রীকরণপদ্ধতি বা শবদাহপ্রথার প্রচলন হইল, যে প্রথা ইরানীয় আর্যগণ কখনও গ্রহণ করেন নাই। (গ) ইরান দেশে আতর, অত(atar)—- প্রাচীন ইরান দেশের সমগ্র সভ্যতা অথবা আর্যসংস্কৃতি অগ্নিকে কেন্দ্র করিয়াই গড়িয়া উঠিয়াছিল। জরথুস্ত্র (Zarathustra ) | পরিপূর্ণ একেশ্বরবাদ প্রচার করিয়া যজ্ঞের পরিবর্তে যশনের | (Yasna) বা পূজাবিধির প্রচলন করেন এবং মুর্তিপূজা, | গােমেধ, হওম (Haoma) ও সােমপান নিষিদ্ধ করেন।

অগ্নি এবং ইন্দ্র পশুবধের সহিত বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলিয়া আবেস্তীয় গাথায় তাহাদের আদৌ উল্লেখ নাই কিন্তু তাহার পরিবর্তে আদিম আর্য জাতির (proto| Aryan) বেদী অথবা কুস্থিত অগ্নির মাহাত্ম্য কীর্তিত

১১