পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অঙ্গুলিমাল
অচিন্ত্যভেদাভেদবাদ

১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে বহু টিপশালা। স্থাপিত হয়। বিভিন্ন জাতির করতলে হাের্ল, লুপ ও আর্চ -এর অনুপাত অবলম্বন করিয়া সম্পর্কনির্ণয়ের চেষ্টা নৃতত্ত্ববিগণ করিয়া থাকেন। কিন্তু এই বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত সাধনস্তরে। রহিয়াছে, পূর্ণ সিদ্ধিলাভ ঘটে নাই।

পঞ্চানন ঘােষাল

অঙ্গুলিমাল প্রথম জীবনে অঙ্গুলিমাল ছিলেন একজন নৃশংস দস্যু। বুদ্ধের সংস্পর্শে আসিয়া তাহার চরিত্র ও স্বভাবের সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়। তিনি বুদ্ধের শরণ লন। এবং পরে অহং হন। ইনি কোশলরাজের পুরােহিতপুত্র ছিলেন এবং তাহার নাম ছিল অহিংসক। তক্ষশিলায় পাঠ লইবার সময় তিনি গুরুর অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। সতীর্থগণ অহিংসকের প্রতি গুরুর স্নেহ দেখিয়া অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত হন এবং নানা উপায়ে অহিংসকের প্রতি গুরুর মন বিষাক্ত করিয়া দেন। অহিংসকের ধ্বংস কামনা করিয়া গুরু তাহার নিকট গুরুদক্ষিণা হিসাবে মানুষের এক হাজার দক্ষিণ-হস্তাঙ্গুলি দাবি করিলেন। অহিংসক তখন কোশলের অরণ্যপথে অতর্কিতে পথিকদিগকে হত্যা করিতে লাগিলেন এবং প্রত্যেকটি নিহত পথিকের হস্ত হইতে একটি করিয়া অঙ্গুলি সংগ্রহ করিয়া গলায় মালা করিয়া ঝুলাইয়া রাখিলেন। এইজন্যই অহিংসকের নাম হইল অঙ্গুলিমাল। অঙ্গুলিমালের অত্যাচার হইতে ভীত সন্ত্রস্ত প্রজাসাধারণকে রক্ষা করিবার জন্য কোশলরাজ ঐ দস্যকে ধরিতে তাহার সৈন্য পাঠাইলেন। দস্যর নাম কিন্তু কেহই জানিত না। কে ঐ দ্য তাহা অহিংসকের মাতা বুঝিতে পারিয়া পুত্রকে সৈন্যবাহিনী সম্বন্ধে সাবধান করিতে অরণ্যে গেলেন। ঐ সময় অঙ্গুলিমালের সহস্র অঙ্গুলি পূর্ণ হইতে একটিমাত্র অঙ্গুলি অবশিষ্ট ছিল। মাতাকে আসিতে দেখিয়া দস্যু তাহার সহস্র অঙ্গুলি পূর্ণ করিবার বাসনায় তাহাকে হত্যা করিতে স্থির করিলেন। বুদ্ধ এই সময়ে উপস্থিত হইয়া তাহাকে রক্ষা করেন এবং বুদ্ধের প্রভাবে অঙ্গুলিমালের পরিবর্তন ঘটে। বুদ্ধ পরে অঙ্গুলিমালকে কোশলরাজ প্রসেনজিতের সম্মুখে উপস্থিত করান এবং রাজা তাহার পরিবর্তন দেখিয়া অত্যন্ত বিস্মিত হন। শ্রাবস্তীতে ভিক্ষাগ্রহণের সময় জনসাধারণ অঙ্গুলিমালকে আক্রমণ করিলেও বুদ্ধের উপদেশে অঙ্গুলিমাল তাহাদের সকল অত্যাচার নীরবে সহ্য করিয়া প্রাণ বিসর্জন করেন।

G. P. Malalasekera : A Dictionary of Pali Proper Names, London, 1937.

বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

অচিন্ত্যভেদাভেদবাদ চৈতন্যদেব-প্রবর্তিত বৈষ্ণবমত গৌড়ীয় বা বঙ্গীয় বৈষ্ণবমত নামে পরিচিত। রূপ, সনাতন, সার্বভৌম, রামানন্দ, স্বরূপদামােদর প্রভৃতি অনুচরগণ তাহার মুখনিঃসৃত বাণী হইতে কৃষ্ণতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, ভক্তিতত্ত্ব ও রসতত্ত্ব সম্বন্ধে তাহার অভিমত অবগত হইয়াছিলেন। জীবগােস্বামী-প্রণীত ‘ভাগবতসন্দর্ভ’-ই বঙ্গীয় বৈষ্ণবদিগের সর্বপ্রধান দার্শনিক গ্রন্থ। সর্বসম্বাদিনী নামে | এই গ্রন্থের একটি অনুব্যাখ্যা আছে। জীবগােস্বামী এই অনুব্যাখ্যায় অচিন্ত্যভেদাভেদবাদ স্থাপন করিয়াছেন। বঙ্গভাষায় রচিত ‘চৈতন্যচরিতামৃত' গ্রন্থে কৃষ্ণদাস কবিরাজ বঙ্গীয় বৈষ্ণবদর্শনের যাবতীয় তত্ত্বই বিবৃত করিয়াছেন। পরবর্তীকালে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ও বলদেব বিদ্যাভূষণ | তাহাদের রচিত গ্রন্থাদি দ্বারা বঙ্গীয় বৈষ্ণবদর্শনের পুষ্টিসাধন করিয়াছিলেন। বৃন্দাবনবাসী গােস্বামীরা ব্ৰহ্মসূত্রের কোনও ধারাবাহিক ভাষ্য প্রণয়ন করেন নাই। বলদেব বিদ্যাভূষণ গােবিন্দভায্য নামে একখানি ভাষ্য রচনা করিয়া অচিন্ত্যভেদাভেদবাদের ভিত্তি সুদৃঢ় করিয়াছিলেন। কেহ কেহ মনে করেন যে, চৈতন্যদেব স্বয়ং মাধ্বসম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন, কারণ তঁাহার দীক্ষাগুরুর (ঈশ্বর পুরীর ) গুরুদেব মাধবেন্দ্র পুরী মাধ্ব-সম্প্রদায়ের শিষ্য ছিলেন। তাঁহাদের মতে পদ্মপুরাণােক্ত শ্ৰী, ব্ৰহ্ম, রুদ্র ও সনক এই চারিটি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অতিরিক্ত আর কোনও বৈষ্ণব সম্প্রদায় থাকিতে পারে না। রামানুজ শ্ৰ-সম্প্রদায়ের, মধ্ব ব্রহ্ম-সম্প্রদায়ের, বিষ্ণুস্বামী রুদ্র-সম্প্রদায়ের এবং নিম্বার্ক চতুঃসন-সম্প্রদায়ের স্বীকৃত আচার্য। তাহাদের মতে বঙ্গীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায় ব্রহ্ম-সম্প্রদায় বা মাধ্ব-সম্প্রদায়ের একটি শাখামাত্র। কিন্তু এই মত সমর্থনযােগ্য নহে। মাধবেন্দ্র পুরী ও ঈশ্বর পুরীর উপাস্য ছিলেন গােপীজনবল্লভ কৃষ্ণ, তাহাদের লক্ষ্য ব্রজগােপীগণের আনুগত্যে লীলাবিলাসী কৃষ্ণচন্দ্রের প্রেমসেবা; কিন্তু মাধ্বমতাবলম্বীদিগের উপাস্য তত্ত্ব লক্ষ্মীনারায়ণ, লক্ষ্য মুক্তি। মাধ্বমতাবলম্বীরা গােপীগণকে কৃষ্ণের স্বরূপশক্তির মূর্ত বিগ্রহ বলিয়া মনে করেন না ; তাঁহাদের মতে গােপীভাব নিন্দনীয়। মাধবেন্দ্র ও ঈশ্বরানন্দের সন্ন্যাসাশ্রমের উপাধি ‘পুরী’, কিন্তু মাধ্বমতাবলম্বীরা সন্ন্যাসাশ্রমে ‘তীর্থ’ উপাধি গ্রহণ করিয়া থাকেন। যে সকল শ্লোকের উপর নির্ভর করিয়া চারি সম্প্রদায়ের অতিরিক্ত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হইয়াছে

১৮