পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অজন্টা মধ্যে চারিটি (১, ২, ১৬ এবং ১৭) স্থাপত্যে, ভাস্কর্যে ও চিত্রণে অনবদ্য। এইগুলির মধ্যে ১৬ নং বাকাটরাজ হরিষেণের (৪৭৫-৫০০ খ্রী) মন্ত্রী বরাহদেবের এবং ১৭ নং হরিষেণেরই অধীন একজন সামন্তনৃপতির উৎসর্গ। এই পর্বের চৈত্যগৃহত্রয়ের ২৯ সংখ্যক গুহা অসমাপ্ত। অপর দুইটিতে ( ১৯ ও ২৬) পূর্বেকার গঠনরীতি অনুসৃত হইলেও লক্ষণীয় পার্থক্যও বিদ্যমান। প্রথমত, অভ্যন্তরভাগ অলংকারবহুল কারুকার্যখচিত; দ্বিতীয়তঃ, আরাধ্যসুপে বুদ্ধমূর্তি উৎকীর্ণ। " শৈলখাত স্থাপত্যের বিবর্তনধারায় অজণ্টার গুহারাজির । ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অজন্টার চিত্রকলার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়ায় এখানকার স্থাপত্য ও ভাস্কর্য বিভব সাধারণতঃ উপেক্ষিত। অথচ, ইহাদের মূল্যও কম নহে। অজন্টার চিত্রাঙ্কন দুইটি বিভিন্ন সময়ে সম্পন্ন হয়। উভয় পর্বের অন্তর্বর্তীকাল সুদীর্ঘ। প্রথম পর্ব খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকের অন্তভুক্ত। আলেখ্যের পরিচ্ছদ পরিধানপদ্ধতি, উষ্ণীষ ও অলংকারাদি সঁচী ও ভারুতের উগত মূর্তির ন্যায়। এই পর্বের চিত্রাবলীতে শিল্পী-হস্তের নিপুণ কাজ অনুভব করা যায়। সমসাময়িক অন্য ভারতীয় ভাস্কর্য অপেক্ষা ইহার। উচ্চস্তরের। ইহাদের পূর্ববর্তী ও সমসাময়িক চিত্র এখন প্রায় অবলুপ্ত ; সেইজন্য ভারতের চিত্রকলার ইতিহাসে ইহাদের গুরুত্ব খুবই বেশি। | চতুর্থ-পঞ্চম শতাব্দীতে স্থাপত্যকর্ম তৎপরতার পুনরুদ্দীপনের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রাঙ্কনের দ্বিতীয় পর্বের আরম্ভ এবং পরবর্তী তিন শতাব্দী ইহার ব্যাপ্তি। বিভিন্ন শিল্পীর রচিত বলিয়া শিল্পমানে ইতর-বিশেষ থাকিলেও পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতকের চিত্ররাজি সৌন্দর্যে, ব্যঞ্জনায়, রঙের পরিকল্পনায় সুসমঞ্জস সার্থক রেখাবিন্যাসে বৈচিত্র্যে ও গতিশীলতায় সমৃদ্ধ। এই চিত্ররাজিতে নর-নারীর ললিত সৌন্দর্য ও বিচিত্র আবেগ নিখুত ও জীবন্ত রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। বাস্তবিকই প্রাচীর-চিত্রাঙ্কনে চিত্রকর এখানে সর্বোৎকৃষ্ট শিল্পমানের দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। এই মানের অবনতি পরিলক্ষিত হয় সপ্তম শতকের আলেখ্যে। এই সময়কার বুদ্ধের ছবিগুলি নিষ্প্রাণ ও ভাবব্যঞ্জনাবর্জিত। কক্ষের প্রাচীর ও স্তম্ভের চিত্রাবলীর উপজীব্য বিষয় একান্তই ধর্মভাবাপন্ন। বুদ্ধদেব, বােধিসত্ত্ববৃন্দ, বুদ্ধদেবের জীবনের বিচিত্র ঘটনা ও জাতকের কাহিনী অবলম্বনে এইগুলি অঙ্কিত। এই আলেখ্যরাজিতে সমসাময়িক রাজপ্রাসাদ, কুটির, নগর, গ্রাম, আশ্রম ইত্যাদির জীবনযাত্রা প্রতিফলিত হইয়াছে। উপরন্তু চিত্রগুলি তদানীন্তন সমাজের সংস্কারবিশ্বাস, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, পােশাক-পরিচ্ছদ,________________

অজন্ট। বাদ্যযন্ত্রাদি, আসবাবপত্র, এমন কি যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রক্রিয়ারও প্রামাণিক দলিলবিশেষ। এই সকল আলেখ্যের মাধ্যমে সেই প্রাচীন যুগের মানুষের কল্পনার দেবদেবী ও উপদেবতা -অধ্যুষিত স্বর্গরাজ্যের আভাস পাওয়া যায়। বর্ণাঢ্য অলংকরণ ছাদের নিম্নপিঠের চিত্রাবলীর বৈশিষ্ট্য। তরু, লতা, গুল্ম, ফুল, ফল, পশু, পক্ষী, মানব ও কিন্নর প্রভৃতি লইয়া বিচিত্র নকশার সমারােহ। সর্বত্রই স্বাভাবিকতা, সজীবতা ও ললিত সৌন্দর্যের অভিব্যক্তি। এইগুলি সন্দেহাতীতভাবে চিত্রকরের তুলির অসাধারণ শক্তিমত্তার পরিচয়বহ।

অনেকে ফেস্কো আখ্যা দিলেও অজন্টার চিত্রাবলী ফ্রেস্কো নহে, কারণ ফ্রেস্কো টেকনিক (fresco buono, ইহাতে সদ্যসিক্ত চুন-পলস্তারার উপর কোনও প্রকার আটকাইবার উপাদান না দিয়া শুধু জলের সহিত রঞ্জকপদার্থ মিশাইয়া চিত্রণ করা হয়। এখানে অনুসৃত হয় নাই। এখানে আঠা ব্যবহার করা হইয়াছে। কাদামাটি | তুষ ও সমজাতীয় অন্য বস্তুর সঙ্গে মিশ্রিত করিয়া প্রাচীর| গাত্রে পুরু আস্তরণ দেওয়া হয়। তাহার উপর খুব | পাতলা চুনের প্রলেপ দিয়া প্রথমে আলেখ্যের রেখাগুলি টানা হয়, পরে বিভিন্ন রঙের সমাবেশে রেখাগুলির অন্তর্বর্তী স্থল পূর্ণ করা হয়। একমাত্র ল্যাপিস্ লাজুলি (lapis lazuli ) ব্যতীত রঙের সমস্ত উপাদানই ( লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের গিরিমাটি, ভুসাে কালি, চুন ও নীলরঙের ল্যাপিস্ লাজুলি পাথর) স্থানীয় । J J. Fergusson and J. Burgess, The Cave Temples of India, London, 1880 ; J. Burgess and Bhagwanlal Indraji, Inscriptions from the Cave Temples of Western India, Arch. Surv. | west. Ind, No. 10, Bombay, 1881 ; J. Burgess, Report on the Buddhist Cave Temples and Their Inscriptions, Arch. Surv. West. Ind, IV, London, 1883 ; J. Griffiths, The Paintings in the Buddhist Cave-Temples of Ajanta, I-II, London, 1896-97 ; Ajanta Frescoes, India Society, London, 1915; A. Foucher, Preliminary Report on the Interpretation of the Paintings and Sculptures of · Ajanta, Jour. Hyderabad Arch. Soc. for 1919-20, Bombay, 1921 ; V. Goloubew, Documents pour Servir a l'elude d' Ajanta-les peintures de la premiere grotte, Ars Asiatica, X, Paris and

২৯