পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনন্তনাথ অনন্তনাথ চতুর্দশ জৈন তীর্থংকর। ইহার পিতা কোশলাধিপতি সিংহসেন এবং মাতা রাজ্ঞী সুযশ। মাতা গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে একটি অনন্ত মুক্তার মালা দেখিয়াছিলেন। সেইজন্য পুত্রের নাম রাখা হইল অনন্ত। ইনি অশ্বখবৃক্ষের মূলে সিদ্ধিলাভ করিয়াছিলেন। ইহার চিহ্ন সজারু, নির্বাণ সুমেরু শিখরে।। সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় অনন্তবর্মা চোড়গঙ্গ পূর্বগজ বংশীয় বিখ্যাত নৃপতি। তিনি উৎকল দেশ জয় করেন। প্রায় সত্তর বৎসর ব্যাপী শাসনকালে ( আনুমানিক ১০ ৭৬-১১৪৮ খ্রী) তিনি চোল, চালুক্য ও পাল বংশীয় রাজগণের সহিত যুদ্ধ করিয়া এক বিশাল রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। তাঁহার সময়ে পূর্বগঙ্গ রাজ্যের সীমানা উত্তরে গঙ্গা নদীর মােহনা হইতে দক্ষিণে গােদাবরী নদীর মােহনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অনন্তবর্মা ধর্ম ও শিল্পেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দির তাহার রাজত্বকালেই নির্মিত হয়। | সৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অনন্ত ব্ৰত ভাদ্রমাসের শুক্লা চতুর্দশীতে চতুর্দশ বর্ষ যাবৎ এই ব্রত করণীয়। ব্ৰতােপলক্ষে অনন্তদেব বা বিষ্ণুর পূজা করিতে হয়। পূজায় অন্যান্য সাধারণ দ্রব্যের সহিত চতুর্দশ ফল এবং যব, গোধুম বা তণ্ডুলচূর্ণ দ্বারা প্রস্তুত পিষ্টক দেবতাকে নিবেদন করিতে হয়। ব্রতীকে চতুর্দশসূত্রনির্মিত ও বিষ্ণুনামপূত চতুর্দশাগ্রন্থিযুক্ত ডাের বাহুতে ধারণ ও ব্রতকথা শ্রবণ করিতে হয়। ব্রতের ব্যবস্থা বাংলার রঘুনন্দনের ‘তিথিতত্ত্ব ও মিথিলার রুদ্রদেবের ‘বর্ষকৃত্য প্রভৃতি গ্রন্থে বিবৃত হইয়াছে।। চিন্তাহরণ চক্রবর্তী অনন্তলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (১২৩৯-১৩০৩ বঙ্গাব্দ)। অনন্তলাল বিষ্ণুপুর ঘরানার গায়ক ও গীতরচয়িতা। বিষ্ণুপুরের সংগীতগুরু রামশংকরের শেষ জীবনের তিনি অন্যতম শিষ্য। স্থানীয় সংগীত বিদ্যালয়ের তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন। বিষ্ণুপুরের রাজার সংগীত-সভায় গায়ক রূপে অনন্তলাল আজীবন জন্মভূমিতে বাস করিয়াছেন। সংগীতজগতে তাহার তিন কৃতী পুত্র রামপ্রসন্ন, গােপেশ্বর ও সুরেন্দ্রনাথের মধ্যে প্রথম দুই জনের প্রথম সংগীত শিক্ষা পিতার নিকটে। রচিত গীতাবলীর মধ্যে ‘একি রূপ হেরি হরি’, ‘দীনতারিণী বােলে মা’, ‘মধু ঋতু আই’ ইত্যাদি সমধিক প্রসিদ্ধ। বিষ্ণুপুরবাসী আরও কয়েকজন গায়ক তাঁহার শিষ্য ছিলেন।

ভা ১৭

অনশনব্রত | প্ৰ দিলীপকুমার মুখােপাধ্যায়, বিষ্ণুপুর ঘরানা, ১৯৬৩ খ্রী। দিলীপকুমার মুখােপাধ্যায় অনশন রাজনৈতিক কারণে অনশন দুই উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত হইয়াছে। পণ্ডিত রামরক্ষা ও যতীন দাস ম্যাক্সুঈনী কারাগারে অপমানকর অবস্থায় বাঁচা অপেক্ষা অনশনে দেহত্যাগ শ্রেয়ঃ বলিয়া বিবেচনা করেন। ইহা জাপানের হারা-কিরির সহিত তুলনীয়। | সত্যাগ্রহে অনশনের প্রয়ােগ অন্য কারণে হয়। সৎশক্তি সচরাচর সমাজে অসৎ-শক্তি অপেক্ষা দুর্বল। গান্ধীজী সং-শক্তিকে জাগ্রত বা উদ্দীপিত করিবার উদ্দেশ্যে অনশনব্রত গ্রহণ করিতেন। হিন্দু-মুসলমান-বিরােধ (১৯২১, ১৯৪৭ খ্র) ও অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ (১৯৩২ খ্র) ইহার লক্ষ্য ছিল। সমাজের সৎ-শক্তি অগ্রসর হইয়া যদি ইহার নিরাকরণ না করে তবে জীবন ধারণ নিরর্থক- ইহাই তঁাহার যুক্তি ছিল। এইরূপ অনশন মিত্রদের প্রতি প্রেমের বশে প্রযুক্ত হইতে পারে, শত্রুর প্রতি ক্রোধের বশে নহে। নির্মলকুমার বসু অনশনব্রত অনশন অর্থ উপবাস, ভােজন হইতে বিরত থাকা। অনশনব্ৰত আহার পরিত্যাগের সংকল্প। সাধারণতঃ অনশন বলিতে মৃত্যুসংকল্পপূর্বক উপবাস বুঝায়। স্তর ভেদে অনশন ত্রিবিধ স্বল্পানশন, অধানশন ও পূর্ণানশন। স্বল্পানশন ও অর্ধনশন আংশিক অনশন, | পূর্ণানশন নিরঙ্কু উপবাস।

| অনশন প্রথা অতি প্রাচীন কাল হইতে প্রচলিত। বর্তমান কালেও সভ্য-অসভ্য সকল জাতির মধ্যেই এই প্রথা অল্পবিস্তর বিদ্যমান রহিয়াছে। অবিচারের প্রতিবাদস্বরূপ প্রাচীনকালেও অনশন করা হইত, বর্তমানেও করা হইয়া থাকে। বর্তমান রাজনৈতিক আন্দোলনে অনশনব্ৰত প্রয়ােগে মৃত্যুবরণের দৃষ্টান্ত যেমন আছে (যতীন দাস), তেমনি বহু ক্ষেত্রে অবিচারের প্রতিকার হইতেও দেখা গিয়াছে। কয়েকটি জাতির মধ্যে প্রতিহিংসা-গ্রহণপ্রবৃত্তি চরিতার্থ না হওয়া পর্যন্ত অনশনের প্রথা বিদ্যমান। অতি প্রাচীন কাল হইতে বিভিন্ন জাতির সামাজিক রীতিনীতিতেও অনশনব্রত পালনের বিধান রহিয়াছে। স্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসকেরা আংশিক অনশনের ব্যবস্থা দিয়া থাকেন। প্রায়শ্চিত্তের জন্য অনশন ও কামনাপূরণের জন্য অনশন করিয়া হত্যা দেওয়ার প্রথাও সুপ্রাচীন। মনু বলেন, প্রাপ্য অর্থ আদায়ের জন্য উত্তমর্ণগণ অধমর্ণের দ্বারে হত্যা দিয়া থাকেন।
৪৯