পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অপভ্রংশ সাহিত্য
অপরাধ-বিজ্ঞান

তাহার আর দুইটি নীতিমূলক কাব্য হইতেছে ‘উপদেশ রসায়ন রাস’ ও ‘কালস্বরূপ ফুলক’। ইহাদের মধ্যে যথাক্রমে ৮টি ও ৩২টি শ্লোক আছে। এই শ্রেণীর অপর একজন লেখক হইলেন মহেশ্বর সূরি ( ১৩০৯ খ্ৰী)। তিনি হেমহংস সূরির শিষ্য। মার্কণ্ডেয়ের প্রাকৃতসর্বম্বের অপভ্রংশ ভাষার লক্ষণাবলী অবলম্বনে লিখিত সুপ্রভাচার্যের ‘বৈরাগ্যসার’ (১৭৭১ খ্রী) ৭৭টি দোহায় লিখিত এই ধরনের আর একটি নীতিমূলক কাব্য।

উপদেশপূর্ণ দার্শনিক গ্রন্থরচনায় প্রভূত পাণ্ডিত্য দেখাইয়াছেন জৈনাচার্য জোই। কাহারও মতে তিনি ৭ম শতাব্দীতে জীবিত ছিলেন; আবার কেহ কেহ বলেন যে তাহার আবির্ভাব-কাল ১০ ০০ শতকের পূর্বে নহে। তাহার পরমাত্মপ্রকাশ’ ‘যােগর’ শ্রাবকাচার দোহক ও ‘দোহাপাহুড়’ ভাবগাম্ভীর্যে বিশেষ উল্লেখযােগ্য। কথিত আছে, তিনি প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। দেবসেনের সাবয়ধম্মদোহ।, (৮৯৪ খ্রী) রাজসিংহের ১০ম শতাব্দী) পাহুড়দোহা’, অভয়দেব সুরির ‘জয়-তিহুয়ণ’ | স্তোত্র প্রভৃতিও এই জাতীয় গ্রন্থ।

জৈনেরা যে সমস্ত গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন, তাহার ভাষা পশ্চিমী ও দক্ষিণী অপভ্রংশ। পূর্বদেশের প্রাচ্য অপভ্রংশে যে সকল অজৈন গ্রন্থকারের লেখার নিদর্শন পাওয়া যায় তাঁহাদের মধ্যে কাহ্ন, সরহ প্রভৃতির নাম উল্লেখযােগ্য। কাহ্নের ( ৭০০ খ্রী) ও সরহের (১০০০ খ্র)। দোহাকোষ সাধনসংকেতমুলক অপভ্রংশ দোহা। ইহা মূলতঃ উপদেশাত্মক হইলেও ইহাতে প্রভূত কবিত্বশক্তির নিদর্শন আছে। ডাকার্ণবতন্ত্র’ও এই শ্রেণীর গ্রস্থ। তাহারাই সর্বপ্রথম কবিতায় মিল বা অন্ত্যানুপ্রাসের প্রচলন করেন। ইহা হইতেই দেশভাষার ছলে মিলের। উদ্ভব। প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতির (১৪শ শতাব্দী)। ‘কীতিলতাও প্রাচ্য অপভ্রংশের আর একটি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ। প্রাচ্যদেশে যে সমস্ত লেখক অপভ্রংশ গ্রন্থ লিখিয়া যশস্বী হইয়াছেন ছন্দোগ্রন্থ ‘প্রাকৃতপৈঙ্গলে’র লেখক পিঙ্গলাচার্য। ( আনুমানিক ১১শ শতাব্দী) তাহাদের অন্যতম। ইহাতে ‘মাত্রাবৃত্ত’ ও ‘বর্ণবৃত্ত’ উভয় জাতীয় ছন্দেরই আলােচনা আছে। ১৪শ শতাব্দীর শেষের দিকে রত্নশেখর সূরির পরে তিনি বিদ্যমান ছিলেন। তিনি উদাহরণসহ যে সব। ছন্দের আলােচনা করিয়াছেন তাহাদের মধ্যে মাত্রাবৃত্তে গাহা, বিগগাহা, উগগাহা, দোহা, বােলা, ছল্প, কব্বলক্ষণ, দোঅই (দ্বিপদী) প্রভৃতি এবং বর্ণবৃত্তে পঞ্চাল, মলয়, মালতী, মল্লিকা, রূপমালা, তােটক, চাসর, চচ্চরী প্রভৃতি প্রধান ও উল্লেখযােগ্য। এই সমস্ত ছন্দের

উদাহরণ হিসাবে তিনি যে সকল শ্লোক তুলিয়াছেন, তাহার সাহিত্যমূল্য কম নহে।

সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

অপরাধ-বিজ্ঞান মানুষের অপরাধ সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পর্যালােচনা করাই অপরাধ-বিজ্ঞানের (crim:nology) আলােচ্য বিষয়। এই বিজ্ঞানকে প্রধানতঃ তিনটি | মুল বিভাগে বিভক্ত করা হইয়াছে; যথা- মনস্তাত্ত্বিক, ব্যাবহারিক ও প্রায়ােগিক। ইংরেজীতে ইহাদের যথাক্রমে fuffrauta Agrastarfs (criminal psychology), অ্যাপ্লায়েড ক্রিমিনলজি (applied criminology) এবং ফোরেন্সিক সায়ান্স (forensic science) বলা হইয়া থাকে। এই তিনটি শাখাই বর্তমানে এরূপ পুষ্ট হইয়াছে যে, ইহাদের কেন্দ্র করিয়া তিনটি প্রায় স্বতন্ত্র বিজ্ঞান গড়িয়া উঠিতেছে। ইহা পৃথিবীতে আধুনিক বিজ্ঞান বলিয়া পরিচিত হইলেও প্রাচীন ভারতে এই বিদ্যাটির যথেষ্ট প্রচলন ছিল, নানা দিক হইতে তাহার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়।

মনস্তাত্ত্বিক শাখার প্রধান আলােচ্য বিষয় হইল এই যে, মানুষ অপরাধ করে কেন। অন্তর্নিহিত অপম্পৃহা কি রূপে ও কি কারণে জাগ্রত হয় এবং কি রূপে এই ব্যাধি হইতে মানুষ নিরাময় হইতে পারে? এই বিভাগে অপস্পৃহার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, বংশানুক্রম ও পরিবেশ, অপরাধী-বিভাগ, অপরাধী-সমাজ, অপরাধ-চিকিৎসা, অপরাধ-দর্শন, অপরাধ-সাহিত্য, অপরাধ-গবেষণা প্রভৃতি কয়েকটি উপবিভাগ আছে। কি রূপে পরিবেশসস্তৃত অপস্পৃহা সৎ লােকের মধ্যেও আবির্ভূত হইতে পারে, তাহার দৃষ্টান্ত প্রাচীন ভারতের মনীষীরা তৎকালীন রীতি-অনুযায়ী বহু কাহিনীর মাধ্যমে দিয়া গিয়াছেন। কুপরিবেশের মধ্যে মানুষের অপম্পৃহা জন্মায় এবং প্রতিরােধশক্তি অক্ষুন্ন থাকিলে উহা দমন করা যায়। মনস্তাত্ত্বিক অপরাধবিজ্ঞানের আধুনিক পণ্ডিতগণও এই একই মত প্রকাশ করিয়া থাকেন। আধুনিক পণ্ডিতেরা ইহাও বলেন যে, বাক্‌প্রয়ােগ দ্বারাও মানুষের অপম্পৃহা নিবৃত্ত হইয়া থাকে। বিশেষ কোনও ঘটনাও এই অপম্পৃহা দূর করিবার সহায়ক হইতে পারে। বাক্যের ন্যায় কোনও কোনও ঘটনাও মানুষকে প্ররােচিত করিয়া তাহাদের দ্বারা এমন সকল অপকর্ম করাইতে পারে, যাহা তাহারা স্বাভাবিক অবস্থায় কখনও চিন্তাও করিত না।

বিগত শতাব্দীতে ইওরােপে লমূত্ৰসাে এবং গােরিং অপরাধ-বিজ্ঞানের মনস্তাত্ত্বিক দিক সম্বন্ধে প্রভূত আলােচনা
৭২