প্রবহমান। একটার পর আর একটা—এইরূপ ক্রমান্বয়ে এক কালচক্রের পর আর এক কালচক্র, এক যুগের পর যুগান্তর পুনরাবৃত্ত হইতেছে। এই শ্রেণীপরম্পরা অনন্ত—ইহা কস্মিন্ কালেও আরম্ভ হয় নাই, এবং কস্মিন্ কালেও ইহার শেষ হইবে না। এই জগতের মধো ‘মনুষ্য’ পদার্থ টা কি?—চিন্তাশীল জীব বটে, কিন্তু অন্যান্য জীবেরই মত, অর্থাৎ কিছুকালের জন্য কতকগুলি শক্তি একাধারে সমবেত হইয়াছে—কিছুকাল পরেই উহা বিক্ষিপ্ত ও বিলীন হইয়া যাইবে। ‘মনুষ্য’ কি?—এমন কতকগুলি বৃত্তি, ভাব, কামনা, ইচ্ছা, ও সংস্কারের সমষ্টিমাত্র যাহাদিগের মধ্যে কিছুকালের জন্য যোগ ও শৃঙ্খলা রক্ষিত হইতেছে। শরীরের মধ্যেও এইরূপ কোষাণু সকল অনুক্ষণ মরিতেছে, জন্মিতেছে, অথচ সমগ্র শরীরের গঠন কিছুকাল সমান ভাবেই থাকিতেছে। মনুষ্যের মধ্যে কিছুই স্থায়ী নহে। জীবনের ঘটনাসকল—যাহা কোন নির্দ্দিষ্ট নিয়মানুসারে একত্র হইতেছে ও পরস্পরকে অনুসরণ করিতেছে এবং যাহা লইয়াই মনুষ্যের ব্যক্তিত্ব,—সেই ঘটনাগুলিও স্থায়ী নহে; কিম্বা যে নির্দ্দিষ্ট নিয়মে এই ঘটনাগুলি ঘটতেছে তাহারও বৃদ্ধি হ্রাস হইয়া ধীরে ধীরে পরিবর্ত্তন হইতেছে। যে সকল উপাদানের সমষ্টি লইয়া প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব তাহা পঞ্চস্কন্ধে বিভক্ত; এবং বৌদ্ধের তন্ন তন্ন করিয়া দেখাইয়া দেন যে, এই স্কন্ধগুলির মধ্যে কোন স্কন্ধই অথবা কোন উপাদানই স্থায়ী নহে। প্রথম স্কন্ধে ভৌতিক পদার্থের গুণসমূহ—যথা বিস্তৃতি, গভীরতা, বর্ণ ইত্যাদি; ইহারা সাগরোৎপন্ন ফেনরাশির ন্যায় উৎপন্ন হইতেছে ও উৎপন্ন হইয়াই পুনর্ব্বার তিরোহিত হইতেছে। দ্বিতীয় স্কন্ধে ইন্দ্রিয়বোধসমূহ—ইহারাও জলোপরি-নৃত্যশীল বিশ্ববৎ। তৃতীয় স্কন্ধে জ্ঞান ও
পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
ভারতবর্ষে।