বর্ত্তনের সার্ব্বভৌমিক নিয়মের হাত হইতে যদি এড়াইতে পারি, তাহা হইলে পরিবর্ত্তনমূলক দুঃখ আর আমাদিগের নিকট আসিতে পারে না। “যে ব্যক্তি এই ঘৃণিত জীবন-তৃষ্ণাকে দমন করিতে পারে, পদ্মপত্রস্থ জলবিন্দুবৎ দুঃখ তাহা হইতে সহজে অপসারিত হয়।’
এই পূর্ণ অবস্থা লাভের পন্থাগুলি এই;—প্রথম, আত্মবিভ্রম ও ক্রিয়াকলাপ অনুষ্ঠানের বিশ্বাসকে বিনাশ করা। দ্বিতীয়, সমস্ত রিপু, সমস্ত বিদ্বেষ, সমস্ত মায়া-মোহ বিনাশ করা; তৃতীয়, আত্মানুরাগের কোন চিহ্নমাত্র না রাখা; চতুর্থ, ধ্যানবলে মুক্তিলাভ করিয়া ভৌতিক ও আধ্যাত্মিক সর্ব্বপ্রকার অস্তিত্বের কামনা হইতে বিরত হওয়া। এই স্থলে উপনীত হইতে পারিলেই মনুষ্য মুক্ত হয়। আপনার উপর তাহার আর আস্থা থাকে না, আকর্ষণ থাকে না, অন্যের কাজে আপনাকে সমর্পণ করিতে পারে; ঔদার্য্য, পরদুঃখকাতরতা তাহার মনকে অধিকার করে। যেমন, মাতা, আপনার প্রাণ পর্য্যন্ত পণ করিয়া আপনার একমাত্র সন্তানকে রক্ষা করে, সেইরূপ সে বিশ্বজনীন প্রেমের—অসীম পরানুরাগের অনুশীলন করে। এই প্রেম তাহার চতুর্দ্দিকে, তাহার উর্দ্ধে, তাহার নিম্নে বিকশিত হইয়া উঠে—সেই বিশুদ্ধ প্রেম যাহার সহিত স্বার্থের কোন সম্পর্ক নাই। জাগিয়া থাকুক, দাঁড়াইয়া থাকুক, বসিয়া থাকুক, কার্য্য করুক, অথবা শয়ন করুক, সকল অবস্থাতেই সকল সময়েই এই ভাবটি তাহার মনে দৃঢ়রূপে নিবদ্ধ থাকে।’—‘তাহার ইন্দ্রিয় সকল প্রশান্ত হইয়াছে; বশীভূত অশ্বের ন্যায়, সে গর্ব্ব হইতে মুক্ত—তার অজ্ঞান-মলা বিধৌত—দেহের উত্তেজনা, জীবনের উত্তেজনা তাহার আর অনুভব হয় না, দেবতারাও তাহার অবস্থাকে ঈর্ষা করেন।’ ‘যাহার চরিত্র সবল, সে ধরার ন্যায় অচল—স্তম্ভের ন্যায় অটল—স্ফটিক-স্বচ্ছ সরোবরের ন্যায় প্রশান্ত—