কতকগুলি গীতিকবিতা মাত্র; রোষ, দ্বেষ, নিরাশা, উৎসাহ, উচ্ছ্বাস, মনের প্রচণ্ড ভাবসমূহ, আত্মার সমস্ত কম্পন ও আন্দোলন, রূঢ় উপমার দ্বারা ও জ্বলন্ত কল্পনা-সহকারে ব্যক্ত হইয়াছে মাত্র; তাহার লিখনধারাও বিচ্ছিন্ন ও আকস্মিক এবং ভাষাও অতি সরল ও অস্ফুট; সে ভাষায় দার্শনিক চিন্তার তরঙ্গলহরী অনুসরণ করা সুকঠিন—তাহাতে কেবল অস্ফুট কণ্ঠে মানব আত্মার আবেগ প্রকাশ করা যায় মাত্র। মনের আবেগ স্থায়ী ও প্রচণ্ড হইলে তাহার ফল কি হয়?—না, মানুষ আপনার উপর ফিরিয়া আইসে। যখন সে যন্ত্রণা ভোগ করে, যখন সে কাহারো প্রতি দ্বেষ প্রকাশ করে, তখন সে আপনাকে অতিক্রম করিতে পারে না। যে বহির্জগতের সহিত তাহার সংঘর্ষণ উপস্থিত হয়, সে বহির্জগৎকে সে পৃথক্ ভাবে দর্শন করে। যে আত্মা আবেগপূর্ণ তাহাতে আমিত্ব দৃঢ়রূপে সংলগ্ন থাকে ও পৃথক্ভাবে অবস্থান করে; এই অবস্থাতে সে যখন জগতের মূল তলাইয়া দেখিবার চেষ্টা করে, তখন সে সেই মূলকে স্বতন্ত্র ও সর্ব্বশক্তিমান আত্মা বলিয়াই কল্পনা করে।
“কিন্তু ব্রাহ্মণদিগের মনের গতি ভিন্নরূপ হওয়ায় তাহাতে ভিন্নরূপ ফল উৎপন্ন হইয়াছে। বেদে কি দেখিতে পাওয়া যায়? তাহাতে কেবল প্রকৃতিবর্ণনামূলক কবিতা,—অরুণ, বরুণ, ইন্দ্র, অগ্নি, আকাশ, বায়ু, পৃথিবী ইহাদেরই স্তুতিগান। উহা বহির্মুখী, অন্তর্মুখী নহে। উহাতে ব্যক্তিগত হৃদয়ের ভাব কিছুই নাই। উহাতে আত্মা স্বতন্ত্র বলিয়া উপলব্ধি হয় না, কেবল প্রকৃতির প্রতিবিম্ব—পরিবর্ত্তনশীল ছায়ামাত্র বলিয়া মনে হয়। প্রকৃতিতে যেমন-যেমন পরিবর্ত্তন উপস্থিত হইতেছে, আত্মাও উপস্থিতমত তাহারই ক্ষণস্থায়ী আকার ধারণ করিতেছে। কখনও মেঘরূপে নীল আকাশে ভাসমান, কখনও সূর্য্যরূপে দিগন্তে সমুদিত। এই