পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



ব্রাহ্মণ্যশাস্ত্রের মায়াবাদ ও অদ্বৈতবাদ।
২৯

আত্মাতে কোন আবেগ স্থায়ীরূপে থাকিতে চায় না, অন্তরে ঘনীভূত হইতে পারে না, পরিপুষ্ট হইতে পারে না; তাহার উপর দিয়া দ্রুতভাবে চলিয়া যায় মাত্র। আত্মা আপনাকে বাহিরে প্রক্ষিপ্ত করে; আপনার চঞ্চল ক্ষণস্থায়ী ভাবসমূহ বহির্জগতে আরোপ করে। যদি আনন্দ হইল, তবে সে আনন্দ অগ্নির—যিনি দ্রাক্ষালতার মধ্যে দীপ্তি পাইতেছেন; যদি লজ্জা ভয়ের উদ্রেক হইল, তবে সে লজ্জা ভয় তরুণ উষার; লজ্জারক্তিম-কপোল বালিকার ন্যায় উষা যেন মেঘের অন্তরালে লুকাইতেছে। অর্থাৎ একটি অখণ্ড পদার্থের মধ্যে কেন্দ্রীভূত না হইয়া, যে ‘আমি’ ইচ্ছা করিতেছে, কাজ করিতেছে, সুখ দুঃখ ভোগ করিতেছে সেই আমির মধ্যে বদ্ধ না থাকিয়া বৈদিক কবি আপনাকে বিশ্বময় ছড়াইয়াছেন। তিনি সমস্ত পদার্থে পরিব্যাপ্ত; প্রকৃতির আকার, প্রকৃতির শব্দ, প্রকৃতির বর্ণ এই সমস্তের স্থান তাঁহার আত্মা অধিকার করিতেছে এবং প্রকৃতিও তাঁহার চিন্তায়, তাঁহার কল্পনায়, সজীব হইয়া উঠিতেছে।

 “বৈদিক কবি প্রকৃতির জীবন্ত ও দেবোপম শক্তিগুলির পূজা করেন বটে, কিন্তু তাঁহার এই অদ্বৈতধর্ম্ম একটু বিশেষ ধরণের। ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি, সূর্য্য এই সকল দেবাত্মা বটে, কিন্তু ইহাদের ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য তেমন সুস্পষ্ট নহে—ইহাদের পরস্পরের মধ্যে আকার-বিনিময় ও পরিবর্ত্তন চলিতেছে। এই উষাই সুর্য্য, এই সূর্য্যই অগ্নি, এই অগ্নিই বিদ্যুৎ, এই বিদ্যুৎই ঝটিকা এবং এই ঝটিকাই বৃষ্টি; সকলই পরস্পরের মধ্যে যুক্ত, মিশ্রিত এবং ওতপ্রোত। ইহার মধ্যে কিছুই স্থায়ী নহে। মনুষ্যের মধ্যেও স্থায়ী ব্যক্তিত্বের ভাব নাই—বাহ্যজগতেও কেবলি পরিবর্ত্তন। এই ভাবটি বেদেতে যাহা বীজরূপে অবস্থিত, তাহা ব্রাহ্মণদিগের