পুরাতন দার্শনিক কাব্যসমূহে বৰ্দ্ধিত ও পরিপুষ্ট হইয়া ক্রমশঃ বৃক্ষরূপে পরিণত হইয়াছে। এই সকল গ্রন্থ পাঠ করিলে দেখা যায়, যে আমিত্বের ভাব যুরোপীয়দিগের চিন্তা ও ধারণার মধ্যে বদ্ধমুল, সেই আমিত্ব উহাতে নাই। মনের এই অবস্থা ভাল করিয়া বুঝিতে হইলে, আমাদের জীবনের কোন বিশেষ মুহূর্ত্তকে স্মরণ করিয়া দেখিতে হয়। কখন কখন আমাদের জীবনে একপ্রকার স্বপ্নবৎ অবস্থা হয়, তখন যেন আমাদের আমিত্বটা শিথিল হইয়া আসে, তখন আপনার নাম উচ্চারণ করিলেও যেন কোন ব্যক্তির ভাব মনে আইসে না, যেন অর্থহীন শব্দমাত্র বলিয়া উপলব্ধি হয়; তখন কষ্টের সহিত আমরা প্রশ্ন করি, ‘আমি কে আছি?’ এই ‘আমি’র অর্থ কি? এই অদ্ভুত অনুভব যাহা আমাদের মধ্যে ক্ষণিক তাহা হিন্দুদিগের অন্তরে স্থায়ীভাবে অবস্থিত। তাহারা আত্মাকে এইভাবে দেখে, যেন উহা একটি ক্ষেত্র—যাহার উপর দিয়া বিবিধ স্বপ্ন ক্রমাগত গতিবিধি করিতেছে; অন্তরের মধ্যে এমন কিছুই দেখিতে পায় না যাহা স্থায়ী। ‘চলৎ চিত্তং চলৎ বিত্তং চলৎ জীবনযৌবনং।’ এই বিশ্বের অনিত্যবাদ হিন্দুদিগের মধ্যে শাস্ত্রাকারে পরিণত হইয়াছে। আমাদের দেহ অন্ন হইতে অর্থাৎ পৃথিবী হইতে উৎপন্ন; বহির্জগত হইতে পঞ্চভূত আহরণ করিয়া আনিতেছে, আবার উহা ত্যাগ করিতেছে, আবার নূতন উপকরণ গ্রহণ করিতেছে; এই প্রকারে দেহ বর্দ্ধিত হইয়া জীবিত রহিয়াছে; আমাদের জীবন কতকগুলি পরিবর্ত্তন ভিন্ন আর কিছুই নহে। ক্ষিতি, তেজ, মরুৎ, ব্যোম, পশুপক্ষী, বৃক্ষ, উদ্ভিজ্জ, চিন্তা, মন, চতুর্ব্বেদ সকলই এই বিশ্বব্যাপী চঞ্চল ক্ষণস্থায়ী আবর্ত্তের অন্তর্ভূত। সূর্য্য সমুদ্র জীবজন্তু উদ্ভিজ্জ হইতে যে বাষ্পরাশি নিঃশ্বসিত হইতেছে এবং যাহা সূর্য্য, জীবজন্তু ও উদ্ভিজ্জ-দেহের অংশীভূত