পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



৩৪
ভারতবর্ষে।

উৎপন্ন হইয়াছে। কিন্তু যেমন এই প্রবহমান নদীসকল সমুদ্রে গিয়া বিলীন হইয়া যায়, তাহাদের নাম ও আকার বিলুপ্ত হইয়া যায়, সেইরূপ, সূর্য্য, চন্দ্র, ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, মক্ষিকা, ভ্রমর, পক্ষী, দেবগণ, বিষ্ণু, শিব এবং স্বয়ং কাল—যাহাতে দ্বিতীয় ব্রহ্ম বাস করেন—এই সমস্ত সেই অচিন্ত্য পুরুষে বিলীন হইয়া যাইবে, তাহাদের নাম ও আকার কিছুই থাকিবে না’। এখনও দৃশ্যমান জগতে যাহা দেখা যায় তাহা কিছুই বাস্তব নহে, তাহা আবিভাবমাত্র। ব্রহ্ম কাল-দর্পণে, মায়া-দর্পণে আপনাকে বহুধা ও বিচিত্র ভাবে দেখিতেছেন; কিন্তু বস্তুতঃ, যাহা আছে তাহাই আছে, তৎসৎ ভিন্ন আর কিছুই নাই।

 “এই অদ্বৈতবাদ, কল্পনার খেলা মাত্র নহে, সম্প্রদায়-বিশেষের মত মাত্র নহে, পরন্তু ইহা একটি গভীর বিশ্বাস যাহা ব্যবহারে পরিণত হইয়াছে, যাহা বিজন চিন্তার ও একাগ্র ধ্যানের সুপরিণত ফল। একমাত্র আপনাতে বদ্ধ হইয়া, স্বপ্নমধ্যে মগ্ন থাকিয়া, ব্রাহ্মণ বাস্তব ও স্বপ্নের মধ্যে আর প্রভেদ দেখিতে পান না, জগৎকে বাষ্পবৎ মনে করেন। জগতের সহিত তাঁহার যে বন্ধন ছিল, সে বন্ধন আর অনুভব করেন না। যাহাকে তিনি অবাস্তব বলিয়া জানিতেছেন তাহাকে কি করিয়া ভালবাসিবেন? যাহা আমাদের হাতের মধ্য দিয়া গলিয়া যাইতেছে, তাহাকে কেমন করিয়া ধরিয়া রাখিবেন?

 ‘হে মুনিপুঙ্গব! এই জঘন্য ক্ষণভঙ্গুর, রক্ত-মাংস-অশ্রু-মূত্র-পুরীষময় দেহ ধারণ করিয়া কিরূপে সুখের আশা করিব? লোভ দ্বেষ, মোহ মাৎসর্য্য, অসূয়া, বিচ্ছেদ, ভয়, দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, জরামৃত্যু, রোগশোকদ্বারা যে দেহ আক্রান্ত সে দেহ লইয়া কিরূপে সুখের আশা করিব? আমরা দেখিতেছি সকলই নশ্বর।