পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতবর্ষে—জয়পুর।
৪৭

ইহারা চলিতে থাকে—ছায়ার ন্যায় একেবারে নিস্তব্ধ। ইহাদের প্রকাণ্ড বিষণ্ণ মস্তকের অভ্যন্তরে না জানি কি গভীর চিন্তা প্রবাহিত হইতেছে, যে সকল নিকৃষ্ট জীবজন্তু ও লোকজন ইহাদের সন্মুখ দিয়া যাইতেছে তাহাদের প্রতি দৃক্‌পাত নাই। ইহাদিগকে দেখিলে বুঝা যায়, কেন গজমুণ্ডধারী গণেশ জ্ঞানের দেবত হইয়াছেন। ... ...

 প্রতিমুহূর্ত্তে চিত্র পরিবর্ত্তিত হইতেছে। আমি এই চলন্ত ছবি আঁকিবার চেষ্টা করিতেছি। প্রাসাদের একটা উচ্চ দ্বারের সম্মুখে স্থূলচর্ম্মী জন্তুসকল, উষ্ট্র, লোকজন, বাজপক্ষীর ঝাঁক্। তোরণের উপরে কুলাঙ্গির অভ্যন্তরে একটা লোহিত হস্তিমূর্ত্তি সুসুপ্ত—তাহার সম্মুখে লোকেরা ঘুরিতেছে, চীৎকার করিতেছে। এবং তীক্ষ্ণধ্বনি তুরি ভেরী হইতে হিন্দু-সঙ্গীত উত্থিত হইতেছে।

 সেই প্রশস্ত মুক্তস্থানের চতুর্দ্দিকে, মন্দির, স্মরণস্তম্ভ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাসাদশ্রেণী বিরাজিত। ইহাদের মধ্যে একটি অট্টালিকা ঘোর গোলাপীবর্ণ, পিরামিডের ন্যায় সমুত্থিত। ইহার নয় তলা ও শত চূড়া এবং ইহার চৌষট্টি বহিরুদগত গবাক্ষদ্বার; বারাণ্ডা, স্তম্ভশ্রেণী, ও প্রস্তর-খোদিত শত শত কৃত্রিম পুষ্পে ইহা বিভূষিত। সমস্ত গঠনপ্রণালী বাষ্পবৎ বায়ুবৎ লঘু, অসাধারণ ও অদ্ভুত। ইহা বায়ু-প্রাসাদ। এই নামটি অতি সুন্দর। এই প্রকার, নগরের চারিধারের ছোট-ছোট পাহাড়ের উপর মেঘ-প্রাসাদ ও সূর্য্যমন্দির সকল দেখিতে পাওয়া যায়। নগরের অপর প্রান্তে যে গোলাপী রঙের দ্বার দেখা যায় তাহার নাম “পান্নাদ্বার।” আমরা যেন প্রাচ্যদেশের পরী-উপাখ্যানের দৃশ্য-মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছি।

 তুরীনিনাদ শোনা যাইতেছে। করতালের এরূপ ঘোরতর রব হইতেছে যে, অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া থাকিতে হয়। শবসহযাত্রী উল্লাসপূর্ণ এক দল বাদক দ্রুতপদে চলিয়াছে—সুক্ষ্ম শুভ্র