অবস্থিত। পুরোহিতের গলায় মালা, তিনি আসনে উপবিষ্ট, রামায়ণ পড়িবার সময় কখন সুর উচ্চে উঠিতেছে, কখন বা নীচে নাবিতেছে—এবং সেই ছন্দানুসারে তাঁহার দেহ আন্দোলিত হইতেছে। অনেকগুলি চড়াইপাখী এই ভক্তবৃন্দের মধ্যে নির্ভয়ে বিচরণ করিতেছে, এবং বড় বড় কাক, নিদ্রিত গরুদের কাঁধের উপর লাফাইয়া লাফাইয়া বসিতেছে। হিন্দুধর্ম্মেরই এইটি বিশেষ লক্ষণ, এই ধর্ম্ম মুক্তবায়ুতে অনুষ্ঠিত। পূজার এই পবিত্র স্থান—এইখানে, মন্দুরা, পক্ষীশালা ও মন্দির সকলই একত্রিত। পুরোহিতের পশ্চাতে, দালানের প্রান্তদেশে, অন্ধকারাবৃত একটা দেবসিংহাসন, তাহাতে একটা পুত্তলিকা দেখিতে পাওয়া যায়—কালো মুখ-ওয়ালা একটি ছোট পুতুল পার্ব্বতী, লাল-কাপড়-পরা দুটি সিংহ পাহারা দিতেছে। তাঁহার নীচে তাঁহার স্বামী মহাদেব; স্বয়ং মহাদেব নহে—তাঁহার লিঙ্গমূর্ত্তি স্থাপিত। লিঙ্গমূর্ত্তি প্রাণের রূপক-চিহ্ন। বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরা এবং স্বামী-প্রার্থী যুবতীরা এইখানে প্রার্থনা করিতে আইসে।
লোকপূর্ণ চৌরাস্তার অপর ধারে, মন্দিরের সম্মুখে, মহারাজার বিদ্যালয় সমুত্থিত। বায়ু মন্দিরের ন্যায় ইহারও গঠন অদ্ভূত ও রং গোলাপী; আমি দেখিয়া মনে মনে তারিফ করিতেছিলাম, এমন সময়ে বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র আমাকে আহ্বান করিয়া ভিতরে লইয়া গেল। কালেজের প্রধান অধ্যক্ষের সহিত আমার পরিচয় করিয়া দেওয়া হইল; তিনি একটা অন্ধকেরে ছোট ঘরে, রাশীকৃত কেতাবের সম্মুখে বসিয়াছিলেন। তাহার হিন্দু-মুখশ্রী অতি মধুর, অতি সুন্দর, একটু চিন্তান্বিত, সমস্ত মুখের গঠন বিদ্যানুরক্ত ব্যক্তির ন্যায় কৃশ ও উন্নতললাটসম্পন্ন; তাঁহার পরিচ্ছদের মধ্যে সাদাসিধা একটি কালো রঙের লম্বাচাপ্কান মাত্র। অতি সংযত অঙ্গভঙ্গীর