শতাব্দি পূর্ব্বে যাহা ছিল এখনও তাহাই আছে। ইহা হিন্দুজগতের হৃদয়-দেশ—সেই অগ্নিস্থান যেখানে ব্রাহ্মণ্য অনল সর্ব্বদাই প্রজ্জলিত রহিয়াছে। সেই পুরাকালের ব্রাহ্মণেরা, যাঁহারা পুত্র-মুখ দেখিবার পর ঘোর অরণ্যে প্রবেশ করিয়া বিজনে বিশ্বজনীন মূলতত্ত্বের ধ্যান করিতেন, তাঁহারা এই বারাণসী কিম্বা এই গাঙ্গেয় উপত্যকার নিকটবর্ত্তী প্রদেশের অধিবাসী। এই স্থানেই হিন্দুচিন্তার পরিণামস্বরূপ মহা-মহা ছয়ট দর্শন বিরচিত হইয়াছিল। পঞ্চবিংশতি শতাব্দিতেও এই নগর বিখ্যাত ছিল। হাঁ, যখন নিনিভার সহিত ব্যাবিলনের দ্বন্দ্ব চলিতেছিল, যখন টায়ার মধ্যধরাশায়ী-সাগরের উপকূলে উপনিবেশ স্থাপন করিতেছিল, যখন এথেন্স নগরের হাটবাজার বাগ্মীদিগের বাক্যোচ্ছ্বাসে প্রতিধ্বনিত হইত এবং সেখানকার মন্দিরসকল প্রস্তর মূর্ত্তিতে পূর্ণ হইতেছিল; যখন রোম, কৃষকদিগের নিবাসস্বরূপ একটি ক্ষুদ্র নগরমাত্র ছিল, যখন পুরাতন মিসরীয় ধর্ম্মমতের প্রাদুর্ভাব ছিল, সেই সময়ে এই প্রখ্যাত মহানগরী আজিকার ন্যায় তখনও গৌরবর্ণ ব্রাহ্মণে পরিপূর্ণ। তখনও ব্রাহ্মণদিগের যে সকল লক্ষণ ছিল, এখনও তাহাই দেখা যায়; কর্ম্মকাণ্ডের অনুষ্ঠানের পীড়নে দেহযষ্টি একেবারে নত হইয়া পড়িয়ছে, আপনার মধ্যে আপনি পুঁটুলি বাঁধিয়া আছে, দার্শনিক স্বপ্নদর্শনে নিমগ্ন, চিন্তার সূক্ষ্ম তন্তুজাল আরও সূক্ষ্মতর করিতে করিতে মাথা ঘুরিয়া যাইতেছে—খেয়াল দেখিতেছে—তাঁহাদের নিকট এই নীরেট জগৎ স্খলিত গণিত হইয়া এমন একটি প্রশান্ত নাস্তিত্বে পরিণত হইয়াছে, যেখান হইতে অস্তিত্বের প্রতীয়মান আবির্ভাব মাত্র নিরন্তর সমুত্থিত হয়। ইহাদের মধ্যে শাক্যমুনি একজন। এখান হইতে ত্রিশ ক্রোশ দূরে ইঁহার জন্মস্থান এবং পাঁচ বৎসর কাল ধ্যান ধারণার সাধনা করিয়া বারাণসীতে ইনি
পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
ভারতবর্ষে।