পাতা:ভারতবর্ষে.djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতবর্ষে—বারাণসী।
৬১

থাকে তাহাতে গঙ্গাজলের ছিটা দেওয়া হয়। এই গঙ্গাজলে ভিজিয়া ভিজিয়া ফুলসকল পচিয়া উঠে—তৎপরে গোবর ও এই পচা ফুলে মিশিয়া একপ্রকার কর্দ্দম উৎপন্ন হয়। এই কর্দ্দমের উপর দিয়া পিছলিয়া পিছলিয়া চলিতেছি—আর দুর্গন্ধ ভোগ করিতেছি। এই মানব-জনতার মধ্যে আবার বানরেরা লাফালাফি করিতেছে—খেলিতেছে—ঘরের ছাদে বসিয়া আছে; এবং বন্ধনমুক্ত গাভীসকল ইতস্তত বিচরণ করিয়া ফুল খাইতেছে। প্রাচীন হিন্দু মহাকাব্যে অসংখ্য যুগযুগান্তর কথা, অসংখ্য দেবদেবীর কথা, অসংখ্য জীবজন্তু উদ্ভিজ্জের কথা পড়িয়া যেমন হতবুদ্ধি হইয়া পড়িতে হয়, এইখানকার ব্যাপারসকল দর্শন করিয়া আমার কতকটা সেই রকম মনের ভাব হইয়াছে। আমাদের স্বাভাবিক মনের গতি ও অভ্যাস যেন একেবারে ওলটপালট হইয়া গিয়াছে। মনে হয় যেন এমন একটা দেশে আসিয়াছি যেখানে মানুষ পায়ে না হাঁটিয়া মাথায় হাঁটে। এই মানবজাতি যেরূপে চিন্তা করে, অনুভব করে, জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করে তাহা সম্পূর্ণ আমাদের বিপরীত—আমাদের ভাবের সঙ্গে আদৌ মিশ খায় না। কাশীতে আসিয়া মনে হয়, যেন খেয়াল দেখাই এখানকার স্বাভাবিক অবস্থা। ......

 পাঁচটার সময় উঠিলাম, সাড়ে ছটার সময় নদীর ধারে উপনীত হইলাম। প্রভাতের তরুণ আলোকে দিগন্ত পর্য্যন্ত সমস্ত স্থান তরল রজতবৎ শুভ্রকান্তি। বৃহৎ গঙ্গা নিজ শ্যামল বক্ষ উদ্ঘাটন করিয়া, কর্দ্দমময় ভাঙা-ভাঙা তরঙ্গলহরী বিস্তার করিয়া দুই কূলের মধ্য দিয়া চলিয়াছে। একদিকে বালুকাময় বিস্তীর্ণ মরু—আর একদিকে মন্দির, প্রাসাদ, মসজিদ, মর্ম্মর-প্রস্তরের প্রাচীর—যাহার রেখাসূত্র গোলাবী কুয়াশার গভীরতম দেশে ক্রমশ মিলাইয়া গিয়াছে। ঘাটের প্রশস্ত ধাপসকল উদারভাবে নদী পর্য্যন্ত নামি-