য়াছে এবং সূর্য্যালোকে ঝক্ঝক্ করিতেছে। এইখানে হিন্দুদিগের ভীড়। যাত্রী, পুরোহিত, ভক্তের দল সবাই প্রাভাতিক অর্চ্চনা সমাধা করিবার জন্য—উদীয়মান সূর্য্যকে ও গঙ্গাদেবীকে পূজা দিবার জন্য এখানে সমাগত। সহস্ৰ সহস্ৰ লোক। গৌরবর্ণ ব্রাহ্মণরা—ত্রিবলীশোভিত লম্বোদর—দীপ্তিমান মুণ্ডিত মস্তক—বৃহৎ বৃহৎ তৃণাচ্ছাদিত ছত্র তলে, প্রস্তর ফলকের উপর উপবিষ্ট হইয়া পথিকদিগের নিকট শাস্ত্র হইতে শ্লোক পাঠ করিতেছে। শ্যামবর্ণ শূদ্রেরা মুণ্ডিতমস্তক, কেবলমাত্র অল্প এক গুচ্ছ কেশ ঘাড়ের দিকে লম্বমান—অর্দ্ধ নগ্ন চটুল দেহ। স্ত্রীলোকেরা উজ্জ্বল রঙের কাপড়ে আপাদমস্তক আচ্ছাদিত। তাহারা দাঁড়াইয়া সূর্য্যের দিকে বাহু উত্তোলন করিয়া করযোড়ে পূজা করিতেছে। যতই আমাদের নৌকা জলের উপর দিয়া অগ্রসর হইতে লাগিল ততই মন্দির ও লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি হইতে লাগিল। চারি শত ফুট প্রশস্ত বড় বড় সোপানশ্রেণী প্রকাণ্ড পিরামিডের ন্যায় উর্দ্ধে উঠিয়াছে, তাহাদের সহস্ৰ সহস্র ধাপ—সেই ধাপসমূহের সমান রেখাপাত। গুরুভার অষ্টকোণ স্তম্ভসকল জলমধ্যে নিমগ্ন; হর্ম্ম্য-শ্রেণীর চৌকোনা সম্মুখভাগ—লাল পাথরে ফুলকাটা বড় বড় চূড়া—মার্ব্বলের ভিতর খোদা কুলঙ্গি সকল একটার পর একটা দৃষ্টিপথে আসিতেছে। পুরাতন মিসরের ন্যায়, আসিরিয়ার পৌরাণিক নগরের ন্যায় এখানে পাথরের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড স্তূপ, জ্যামিতিক গঠন-প্রণালী-অনুসারে উপর্য্যুপরি ন্যস্ত। এই সকল অট্টালিকার নিম্নে বহুপুরাতন নদীর ধারে শতসহস্র হিন্দু গতিবিধি করিতেছে—ধর্ম্মানুষ্ঠান করিতেছে।
চারি ঘণ্টা ধরিয়া আমি নদীর উপর নৌকা করিয়া যাতায়াত করিলাম—এই সকল অশেষ বিচিত্রতা—আকার ও ভঙ্গীর অনন্ত তরঙ্গ আমি কি করিয়া বর্ণনা করিব? আলোক-ধবল প্রশস্ত