হয় যেন লণ্ডন কিম্বা প্যারিস-নগরের এক্সচেঞ্জের নিকটে আছি। প্রভেদ এই, বড় বড় কালো কোর্ত্তাপরা, নলাকার-টুপিপরা য়ুরোপীয়ের বদলে সাদা ধুতি-পরা, ক্ষুদ্র, শীর্ণ, সুকুমার স্ত্রীসুলভ মুখশ্রীসম্পন্ন বাঙ্গালীদিগের কলরব। ইহারা সিংহলবাসীদিগের মত অলস ও নিদ্রালু নহে, পরন্তু কর্ম্মশীল, চটুল, দ্রুতগামী ও জীবনউদ্যমে পরিপূর্ণ। পেন্সিলবিক্রেতা ‘হকার’ হইতে ফিটেনে-ঠেসান দেওয়া স্থূলদেহ বাবু পর্যন্ত সবাই অর্থের চেষ্টায় ফিরিতেছে। দেখিয়া বেশ অনুভব হয়, কলিকাতা নগর একটি প্রধান বাণিজ্যের স্থান—পৃথিবীর একটি মহা বিপণি।
এশিয়া ও লণ্ডনের এই সংমিশ্রণ বড়ই অদ্ভুত। এক-এক সময়ে মনে হয় যেন লণ্ডনের ওয়েষ্টএণ্ডে হাউডপার্কের নিকটে আছি। সেই রকম বড় বড় সোজা রাস্তা, সেই রকম উত্তুঙ্গ প্রাসাদ, সেই রকম গ্রীসীয় স্তম্ভযুক্ত গাড়িবারাণ্ডা, সেই রকম বিস্তৃত পদচারণপথ, সেই রকম রেল-ঘেরা চৌকোণা নগরাঙ্গন, রাস্তার কোণে কোণে প্রতিষ্ঠিত সেই রকম ইংরাজি প্রস্তরমূর্ত্তি।”
গ্রন্থকার এক স্থানে ইংরাজের সহিত হিন্দুর তুলনা করিয়া বলিয়াছেনঃ—“ইংরাজেরা এরূপ দুর্ণম্য ও কঠিন যে, বিশ কোটি হিন্দুদিগের মধ্যে হারাইয়া গিয়াও উহাদের কিছুমাত্র পরিবর্ত্তন হয় নাই; পক্ষান্তরে হিন্দুরা লক্ষ ইংরাজের সংস্পর্শেই পরিবর্ত্তিত হইয়াছে বলিয়া মনে হয়। কলিকাতায় দেশীয় লোকেরা ইংরাজিতে গ্রন্থ লিখিতেছে, সংবাদপত্র চালাইতেছে দেখিলাম; শুধু যে তাহাদের ইংরাজি চমৎকার তাহা নহে—তাহাতে ইংরাজি ধরণধারণ, ভাব-ভক্তি, ইংরাজি ধরণের ভাবনা, ইংরাজি ধরণের অনুভব সমস্তই বজায় দেখিতে পাওয়া যায়। কোন কোন প্রবন্ধ পাঠ করিয়া মনে হয় যেন লণ্ডনের কোন উৎকৃষ্ট সমালোচনী-পত্রিকার