পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০
ভারতবর্ষ।

ওয়ে-লেড্‌ল-র দোকান হইতে কিনিয়া লইতেছি—আর সময় দোকান পাট বন্ধ। এই কারখানাটির বিচার হইতে বাণিজ্য পর্য্যন্ত সমস্তই সু হইতে পারে, কিন্তু ইহার মধ্যে কেরাণীশালার এককোণে আমাদের ভারতবর্ষের স্থান অতি যৎসামান্য।

 ইতিহাস সকল দেশে সমান হইবেই, এ কুসংস্কার বর্জন না করিলে নয়। যে ব্যক্তি রথচাইল্ডের জীবনী পড়িয়া পাকিয়া গেছে, সে খৃষ্টের জীবনীর বেলায় তাহার হিসাবের খাতাপত্র ও আপিসের ডায়ারি তলব করিতে পারে; যদি সংগ্রহ করিতে না পারে, তবে তাহার অবজ্ঞা জন্মিবে এবং সে বলিবে, যাহার এক পয়সার সঙ্গতি ছিল না, তাহার আবার জীবনী কিসের? তেমনি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় দফতর হইতে তাহার রাজবংশমালা ও জয়পরাজয়ের কাগজপত্র না পাইলে যাহারা ভারতবর্ষের ইতিহাসসম্বন্ধে হতাশ্বাস হইয়া পড়েন এবং বলেন, যেখানে পলিটিক্স নাই, সেখানে আবার হিষ্ট্রী কিসের, তাহারা ধানের ক্ষেতে বেগুন খুঁঁজিতে যান এবং না পাইলে মনের ক্ষোভে ধানকে শস্যের মধ্যেই গণ্য করেন না। সকল ক্ষেতের আবাদ এক নহে, ইহা জানিয়া, যে ব্যক্তি যথাস্থানে উপযুক্ত শস্যের প্রত্যাশা করে, সেই প্রাজ্ঞ।

 যিশুখৃষ্টের হিসাবে খাতা দেখিলে তাহার প্রতি অবজ্ঞা জন্মিতে পারে, কিন্তু তাহার অন্য বিষয় সন্ধান করিলে খাতাপত্র সমস্ত নগণ্য হইয়া যায়। তেমনি রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে ভারতবর্ষকে দীন বলিয়া জানিয়াও অন্য বিশেষ দিক হইতে সে দীনতাকে তুচ্ছ করিতে পারা যায়। ভারতবর্ষের সেই নিজের দিক হইতে ভারতবর্ষকে না দেখিয়া, আমরা শিশুকাল হইতে তাহাকে খর্ব্ব করিতেছি ও নিজে খর্ব্ব হইতেছি। ইংরাজের ছেলে জানে, তাহার বাপ-পিতামহ অনেক যুদ্ধজয়, দেশ-অধিকার ও বাণিজ্যব্যবসায় করিয়াছে, সে-ও নিজেকে গণগৌরব, ধনগৌরব, রাজ্যগৌরবের অধিকারী করিতে চায়। আমরা জানি, আমাদের