পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৮
ভারতবর্ষ।

জন্য আমাদের ঋষি-পিতামহদের সুগম্ভীর নিদেশ-নির্দ্দেশ প্রাপ্ত হইয়াছি; সে পথে পণ্যভারাক্রান্ত অন্য কোন পান্থ নাই বলিয়া আমরা ফিরিব না, গ্রন্থভারনত শিক্ষকমহাশয় সে পথে চলিতেছেন না বলিয়া লজ্জিত হইব না। মূল্য না দিলে কোন মূল্যবান্‌ জিনিষকে আপনার করা যায় না। ভিক্ষা করিতে গেলে কেবল খুদকুঁড়া মেলে, তাহাতে পেট অল্পই ভরে, অথচ জাতিও থাকে না। বিদেশকে যতক্ষণ আমরা কিছু দিতে পারি না, বিদেশ হইতে ততক্ষণ আমরা কিছু লইতেও পারি না; লইলেও তাহার সঙ্গে আত্মসম্মান থাকে না বলিয়াই তাহা তেমন করিয়া আপনার হয় না, সঙ্কোচে সে অধিকার চিরদিন অসম্পূর্ণ ও অসঙ্গত হইয়া থাকে। যখন গৌরবসহকারে দিব, তখন গৌরব সহকারে লইব। হে ঐতিহাসিক, আমাদের সেই দিবার সঙ্গতি কোন্ প্রাচীন ভাণ্ডারে সঞ্চিত হইয়া আছে, তাহা দেখাইয়া দাও, তাহার দ্বার উদঘাটন কর। তাহার পর হইতে আমাদের গ্রহণ করিবার শক্তি বাধাহীন ও অকুণ্ঠিত হইবে, আমাদের উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি অকৃত্রিম ও স্বভাবসিদ্ধ হইয়া উঠিবে। ইংরাজ নিজেকে সর্ব্বত্র প্রসারিত, দ্বিগুণিত, চতুর্গুণিত করাকেই জগতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ শ্রেয় বলিয়া জ্ঞান করিয়াছে, তাহাদের বুদ্ধিবিচারের এই উন্মত্ত অন্ধ অবস্থায় তাহারা ধৈর্য্যের সহিত আমাদিগকে শিক্ষাদান করিতে পারে না। উপনিষদে অনুশাসন আছে—শ্রদ্ধয়া দেয়ম্‌, অশ্রদ্ধয়া অদেয়ম্‌—শ্রদ্ধার সহিত দিবে, অশ্রদ্ধার সহিত দিবে না— কারণ, শ্রদ্ধার সহিত না দিলে যথার্থ জিনিষ দেওয়াই যায় না, বরঞ্চ এমন একটা জিনিষ দেওয়া হয়, যাহাতে গ্রহীতাকে হীন করা হয়। আজকালকার ইংরাজশিক্ষকগণ দানের দ্বারা আমাদিগকে হীন করিয়া থাকেন,— তাঁঁহারা অবজ্ঞা-অশ্রদ্ধার সহিত দান করেন, সেই সঙ্গে প্রত্যহ সবিদ্রূপে স্মরণ করাইতে থাকেন—“যাহা দিতেছি, ইহার তুল্য