পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ব্রাহ্মণ।
৩৩

নিন্দিত হইত, ঋণী উত্তমর্ণকে ফাঁকি দিত না এবং সাধারণ ধর্ম্মের বিধানগুলিকে সকলে সরল বিশ্বাসে সম্মান করিত।

 সেই বৃহৎ সমাজের আদর্শ রক্ষা করিবারও বিধিবিধান স্মরণ করাইয়া দিবার ভার ব্রাহ্মণের উপর ছিল। ব্রাহ্মণ এই সমাজের চালক, ও ব্যবস্থাপক। এই কার্য্য সাধনের উপযোগী সম্মানও তাঁহার ছিল।

 প্রাচ্যপ্রকৃতির অনুগত এই প্রকার সমাজবিধানকে যদি নিন্দনীয় বলিয়া না মনে করা যায়, তবে ইহার আদর্শকে চিরকাল বিশুদ্ধ রাখিবার এবং ইহার শৃঙ্খলাস্থাপন করিবার ভার কোন এক বিশেষ সম্প্রদায়ের উপর সমর্পণ করিতেই হয়। তাঁহারা জীবনযাত্রাকে সরল ও বিশুদ্ধ করিয়া, অভাবকে সংক্ষিপ্ত করিয়া, অধ্যয়ন-অধ্যাপন যজনযাজনকেই ব্রত করিয়া দেশের উচ্চতম আদর্শকে সমস্ত দোকানদারীর কলুষস্পর্শ হইতে রক্ষা করিয়া সামাজিক যে সম্মান প্রাপ্ত হইতেছেন, তাহার যথার্থ অধিকারী হইবেন, এরূপ আশা করা যায়।

 যথার্থ অধিকার হইতে লোক নিজের দোষে ভ্রষ্ট হয়। ইংরাজের বেলাতেও তাহা দেখিতে পাই। দেশী লোকের প্রতি অন্যায় করিয়া যখন প্রেষ্টিজ্‌রক্ষার দোহাই দিয়া ইংরাজ দণ্ড হইতে অব্যাহতি চায়, তথন যথার্থ প্রেষ্টিজের অধিকার হইতে নিজেকে বঞ্চিত করে। ন্যায়পরতার প্রেষ্টিজ্‌ সকল প্রেষ্টিজের বড়—তাহার কাছে আমাদের মন স্বেচ্ছাপূর্ব্বক মাথা নত করে—বিভীষিকা আমাদিগকে ঘাড়ে ধরিয়া নোয়াইয়া দেয়, সেই প্রণতি-অবমাননার বিরুদ্ধে আমাদের মন ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহ না করিয়া থাকিতে পারে না।

 ব্রাহ্মণও যখন আপন কর্ত্তব্য পরিত্যাগ করিয়াছে, তখন কেবল গায়ের জোরে পরলোকের ভয় দেখাইয়া সমাজের উচ্চতম আসনে আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না।

 কোন সম্মান বিনামূল্যের নহে—যথেচ্ছ কাজ করিয়া সম্মান রাখা