পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চীনেম্যানের চিঠি।
৬৩

এবং তোমাদের সকলকে একটা বিরাট্‌ বিনাশব্যাপারের অনতিদূরে আনিয়া স্থাপন করিয়াছে।

 লেখক বলেন, পরিশ্রম বাঁচাইবার ফল তৈরি করিতে তোমরা যে বুদ্ধি খাটাইতেছ, তাহাতে সমাজের কল্যাণ হইতেছে না। তাহাতে ধনবৃদ্ধি হইতেছে সন্দেহ নাই, কিন্তু সেটা যে মঙ্গলই, আমার মতে, এমন কথা মনে করিবার হেতু নাই। ধন কিরূপে ভাগ হয় এবং সেই ধনে জাতির চরিত্রের উপরে কি ফল হয়, তাহাই চিন্তার বিষয়। সেইটে যখন চিন্তা করি, তখন বিলাতি পদ্ধতি চীনে ঢুকাইবার প্রস্তাবে মন বিগড়িয়া যায়।

 এই তোমরা যতদিন ধরিয়া যন্ত্রতন্ত্রের শ্রীবৃদ্ধিসাধনে লাগিয়াছ, ততদিনে, তোমাদের শ্রমজীবীদিগকে সঙ্কটে ফেলিয়া তাহা হইতে উদ্ধারের কোন একটা ভাল উপায় বাহির কর নাই। ইহা আশ্চর্যের বিষয় নহে; কারণ টাকা করা তোমাদের প্রধান লক্ষ্য, জীবনের আর সমস্ত লক্ষ্য তাহার নীচে। চীনেম্যানের কাছে এটা কিছুতেই উৎসাহজনক ঠেকে না। বিলাতি কারবারের প্রণালী যদি চীনদেশে ফালাও করিয়া তোলা যায়, তবে তাহার চল্লিশকোটি অধিবাসীর মধ্যে যে নিশ্চিত বিশৃঙ্খলা জাগিয়া উঠিবে—অন্তত আমি ত তাহাকে অত্যন্ত আশঙ্কার চক্ষে দেখি! তোমরা বলিবে, সে বিশৃঙ্খলা সাময়িক, আমি ত দেখিতেছি, তোমাদের দেশে তাহা চিরস্থায়ী। আচ্ছা সে কথাও যাক্‌, তাহাতে আমাদের লাভটা কি? আমরা ত তোমাদেরই মত হইয়া যাইব। সে সম্ভাবনা কি অবিচলিতচিত্তে কল্পনা করা যায়? তোমাদের লোকেরা না হয় আমাদের চেয়ে আরামে খায় বেশি, পান করে বেশি, নিদ্রা যায় বেশি—কিন্তু তাহারা প্রফুল্ল নয়, সন্তুষ্ট নয়, শ্রমানুরাগী নয়, তাহারা আইন মানে না। তাহাদের কর্ম্ম শরীরমনের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর,—তাহারা প্রকৃতি হইতে বিচ্যুত হইয়া, ভূমিখণ্ডের অধিকার হইতে