পাতা:ভারতশিল্পে মূর্তি.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



আকৃতি ও প্রকৃতি

 সুগঠিত সর্বাঙ্গমুন্দর শরীর জগতে দুর্লভ এবং এক মানবের আকৃতিপ্রকৃতির সহিত অন্যের আকৃতি-প্রকৃতির মোটামুটি মিল থাকিলেও ডৌল হিসাবে কোনো একের দেহগঠন আদর্শ করিয়া ধরিয়া লওয়া অসম্ভব। সকল মনুষ্যেরই দুই দুই হস্ত ও পদ চক্ষু কর্ণ ইত্যাদি এবং ঐ-সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মোটামুটি গঠনও একই রূপ সত্য, কিন্তু মানবজাতির সহিত ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকা -বিধায় নানা লোকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পার্থক্য আমাদের এতই চোখে পড়ে যে শিল্প হিসাবে দেহগঠনের একটা আদর্শ বাছিয়া লওয়া শিল্পীর পক্ষে দুর্ঘট হইয়া পড়ে। কিন্তু ইতর জীব জন্তু এবং পুষ্প পল্লব ইত্যাদির জাতিগত আকৃতির সৌসাদৃশ্য আমাদের নিকট অনেকটা স্থির বলিয়া বোধ হইয়া থাকে। যেমন একজাতীয় পত্র-পুষ্প হয়-হস্তী ময়ূর-মৎস্যের গঠনের তারতম্য অধিক নাই। একটি অশ্বখপত্র অন্য পত্রগুলির মতোই সূচ্যগ্র ও ত্রিকোণাকার; এক কুক্কুটাণ্ড অন্য কুক্কুটডিম্বের মতোই সুডৌল সুগোল। এইজন্যই বোধ হয় আমাদের শিল্পাচার্যগণ মূর্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ডৌল অমুক মানুষের হস্তপদাদির তুল্য না বলিয়া অমুক পুষ্প অমুক জীব অমুক বৃক্ষলতা ইত্যাদির অনুরূপ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। যথা— মুখম্ বর্তুলাকারম্ কুক্কুটাণ্ডাকৃতি; মুখের আকার কুকুটডিম্বের ন্যায় গোল। পরবর্তী চিত্রে ডিম্বাকৃতি মুখ ও পানের মতো মুখ দেখানো হইয়াছে। চলিত কথায় আমরা যাহাকে পান-পারা মুখ বলি তাহার প্রচলন নেপালে ও বঙ্গদেশে দেবদেবীর মূর্তিসকলে অধিক দৃষ্ট হয়। এখন ‘মূর্খম্ বর্তুলাকারম্’ বলাতে বলা হইল যে মুখের প্রকৃতিই বর্তুলাকার, চতুষ্কোণ বা ত্রিকোণ নয়। কিন্তু মুখের বা মুণ্ডের প্রকৃতিটা স্বভাবতঃ গোলাকার