নেত্র বা নয়ন— মৎস্যাকৃতি। নয়নের ভাব ও ভাষা যেমন বিচিত্র তেমনি নয়নের উপমারও অন্ত নাই। সেইজন্য সফরী বা পুঁটিমাছের সহিত তুলনা দিয়া ক্ষান্ত হইলে ডাগর চোখ, ভাসা চোখ, ইত্যাদি অনেক চোখই বাদ পড়ে। সুতরাং কালে কালে নয়নের আকৃতি প্রকৃতি বর্ণন করিয়া নানা উপমার সৃষ্টি হইয়াছে, যথা— খঞ্জন-নয়ন, হরিণ-নয়ন, কমল-নয়ন, পদ্মপলাশ-নয়ন ইত্যাদি। ইহাদের মধ্যে খঞ্জন ও হরিণ-নয়ন প্রায়শঃ চিত্রিত নারীমূর্তিতে ও কমল-নয়ন পদ্মপলাশনয়ন এবং সফরীর ন্যায় নয়ন পাষাণ ও ধাতু মূর্তিসকলে কি দেব কি দেবী উভয়ের মূর্তি-গঠনেই ব্যবহার করা হয়। ইহা ছাড়া বাংলায় যাহাকে বলে পটল-চেরা চোখ তাহার উল্লেখ শিল্পশাস্ত্রে কিম্বা প্রাচীন কাব্যে পাওয়া যায় না বটে কিন্তু অজন্তা গুহায় চিত্রিত বহু নারীমূর্তিতে পটল-চেরা চোখের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়।
নারী-নয়নের প্রকৃতিই চঞ্চল। তাই মনে হয় যে, শিল্পাচার্যগণ সফরী খঞ্জন এবং হরিণ এই তিন চঞ্চল প্রাণীর সহিত উপমা দিয়া নারী-নয়নের কেবল প্রকৃতিটাই বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছেন। কিন্তু তাহা নয়। খঞ্জন হরিণ কমল পদ্মপলাশ সফরী ইত্যাদি উপমা বিভিন্ন নয়নের প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে নয়নের নানা ভাব ও আকৃতিটাও আমাদের বুঝাইয়া দেয়। খঞ্জন-নয়নের সকৌতুক বিলাস আর সফরী-নয়নের অস্থির দৃষ্টিপাতে এবং হরিণ-নয়নের সরল মাধুরীতে, পদ্মপলাশ-নয়নের প্রশান্ত দৃকপাতে এবং কমল-নয়নের আমীলিত ঢলঢল ভাবে যেমন প্রকৃতিগত প্রভেদ তেমনি আকৃতিগত পার্থক্যও আছে এবং আকৃতির পার্থক্য নয়নের পৃথক পৃথক ভাব-প্রকাশের সহায়তা করে বলিয়াই মূর্তিগঠনে চিত্ররচনায় ভিন্ন ভিন্ন আকারের নয়নের প্রয়োগ দৃষ্ট হয়।
১২