শিল্পশিক্ষার্থীর জন্য; আর শিল্পীর জন্য তাল, মান, অঙ্গুল, লাইট-শেড, পার্সপেক্টিভ আর অ্যানাটমির বন্ধনমুক্তি।
ধর্মশাস্ত্র কণ্ঠস্থ করিয়া কেহ যেমন ধাৰ্মিক হয় না তেমনি শিল্পশাস্ত্র মুখস্থ করিয়া বা তাহার গণ্ডির ভিতরে আবদ্ধ রহিয়া কেহ শিল্পী হয় না। সে কী বিষম ভ্রান্ত যে মনে করে মাপিয়া-জুখিয়া শাস্ত্রসম্মত মূর্তি প্রস্তুত করিলেই শিল্পজগতের সিংহদ্বার অতিক্রম করিয়া শিল্পলোকের আনন্দবাজারে প্রবেশাধিকার লাভ করা যায়।
শ্রীক্ষেত্রের যাত্রী যখন প্রথম জগবন্ধু দর্শনে চলে তখন পাণ্ডা তাহার হাত ধরিয়া উঁচ-নীচা ডাহিন-বাঁয়া এইরূপ বলিতে বলিতে দেবতাদর্শন করাইতে লইয়া যায়; ক্রমে যত দিন যায় পথও তত সড়গড় হইয়া আসে এবং পাণ্ডারও প্রয়োজন রহে না, পরে দেবতা যে দিন দর্শন দেন সে দিন দেউল মন্দির পূর্বদ্বার পশ্চিমদ্বার ধ্বজ চূড়া উঁচা-নীচ দেবতার পাণ্ডা ও অঙ্কশাস্ত্রের কড়া-গণ্ডা সকলই লোপ পায়।
নদী এক পাড় ভাঙে নূতন পাড় গড়িবার জন্য, শিল্পীও শিল্পশাস্ত্রের বাঁধ ভঙ্গ করেন সেই একই কারণে। এটা যে আমাদের প্রাচীন শিল্পশাস্ত্রকারগণ না বুঝিতেন তাহা নয় এবং শাস্ত্রপ্রমাণের সুদৃঢ় বন্ধনে শিল্পীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিলে শিল্পও যে বাঁধা নৌকার মতো কোনোদিন কাহাকেও পরপারের আনন্দবাজারে উত্তীর্ণ করিয়া দিতে অগ্রসর হইবে না সেটাও যে তাঁহারা না ভাবিয়ছিলেন তাহা নয়।
পাণ্ডিত্যের টীকা হাতে করিয়া শিল্পশাস্ত্র পড়িতে বসিলে শাস্ত্রের বাঁধনগুলার দিকেই আমাদের দৃষ্টি পড়ে, কিন্তু বজ্র-আঁটুনির ভিতরে ভিতরে যে ফস্কা গেরোগুলি আচার্যগণ শিল্পের অমরত্ব কামনা করিয়া সযত্নে সংগোপনে রাখিয়া গেছেন তাহার দিকে মোটেই আমাদের চোখ পড়ে না। সেব্যসেবকভাবেষু প্রতিমালক্ষণং স্মৃতম্; এ কথার অর্থ কি
২