শিল্পীকে বলা নয় যে, যখন পূজার জন্য প্রতিমা গঠন করিবে কেবল তখনই শাস্ত্রের মত মানিয়া চলিবে, অন্যপ্রকার মূর্তি-গঠনকালে তোমার যথা-অভিরুচি গঠন করিতে পার। আমি এই প্রবন্ধে ত্রিভঙ্গ মৃতির দুইটি পৃথক চিত্র দিয়াছি—একটি শাস্ত্রসম্মত মাপজোখ ঠিক রাখিয়া, অন্যটি ভারতশিল্পীরচিত শতসহস্র ত্রিভঙ্গ মূর্তি হইতে যে কোনো একটি বাছিয়া লইয়া—শাস্ত্রীয় টান আর শিল্পীর টান দুই টানে দুই ত্রিভঙ্গ কিরূপ ফুটিয়াছে তাহাই দেখাইবার জন্য।
সৌন্দর্যকে দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য যে দিন শাস্ত্রোক্ত মান-পরিমাণ দিয়া ধরিবার চেষ্টা করিতেছিলেন সেদিন হয়তে সৌন্দর্যলক্ষ্মী কোনো এক অজ্ঞাত শিল্পীর রচিত শাস্ত্রছাড়া সৃষ্টিছাড়া মূর্তিতে ধরা দিয়া তাঁহার সম্মুখে আসিয়া বলিয়াছিলেন: আমার দিকে চাহিয়া দেখো! আচার্য দেখিয়াছিলেন, দেখিয়া বুঝিয়াছিলেন ও বুঝিয়াই বলিয়াছিলেন: সেব্যসেবকভাবেষু প্রতিমালক্ষণং স্মৃতম্—লক্ষ্মী, আমার শাস্ত্র ও প্রতিমালক্ষণ তোমার জন্য নয়, কিন্তু সেই-সকল মূর্তির জন্য যেগুলি লোকে পূজা করিতে মূল্য দিয়া গড়াইয়া লয়। তুমি বিচিত্রলক্ষণা! শাস্ত্র দিয়া তোমায় ধরা যায় না, মূল্য দিয়া তোমায় কেনা যায় না!
সর্বাঙ্গৈঃ সৰ্বরম্যো হি কশ্চিল্লক্ষে প্রজায়তে।
শাস্ত্রমানেন যে রম্যঃ স রম্যো নান্য এবহি॥
একেষামেব তদ্ রম্যং লগ্নং যত্রচ যস্য হৃৎ।
শাস্ত্রমানবিহীনং যদ্ রম্যং তদবিপশ্চিতাম্॥
পণ্ডিতে বলেন শাস্ত্রমূর্তিই সুন্দর মূর্তি, কিন্তু হায় পূর্ণ সুন্দর লাখে তো এক মিলে না। একে বলে, শাস্ত্রছাড়া সুন্দর কি? আরে বলে, সুন্দর সে যে হৃদয় টানে, প্রাণে লাগে।
৩