পাতা:ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতীয় প্রাচীন চিত্রকলা
১০১

বাহিরের রূপে ফুটান যায় না, চিত্তাকারে পরিবত্তিত না হইলে সেই চিত্তের অনুরূপ মূর্ত্তিকে ফুটাইয়া তুলা যায় না, এই গভীর তত্ত্বটী অনেক সময়ে আমাদের দৃষ্টিকে বঞ্চনা করে। পাতঞ্জল সূত্রে লিখিত আছে—“তদেবার্থত্রনির্ভাসং স্বরূপ-শূন্যমিব সমাধিঃ” অর্থাৎ “ধ্যানমেব ধ্যেয়াকারনির্ভাসং প্রত্যয়াত্মকেন স্বরূপেণ শূন্যমিব যদা ভবতি ধ্যেয়স্বভাবাবেশাৎ তদা সমাধি রিতুচ্যতে”, অর্থাৎ যখন ধ্যান ধ্যেয়বস্তুর আকারের দ্বারাই সাক্ষিরূপে প্রকাশ পায়, স্বতন্ত্র জ্ঞানরূপে প্রকাশ পায় না এবং চিত্ত ধ্যেয়ের আকারে আকারিত হওয়াতে আমি জানিতেছি আমি ধ্যান করিতেছি এরূপ জ্ঞান যখন থাকে তখন তাদৃশ জ্ঞানকে সমাধি কহে। এই সমাধিতে ধ্যাতৃ ধ্যেয় এবং ধ্যান এই তিনের জ্ঞান থাকে না, চিত্ত কেবলমাত্র ধ্যেয় বস্তুর আকারে আপনাকে প্রকাশ করে। কাজেই আমাদিগকে বলিতে হয় যে চিত্রী যখন চিত্র আঁকেন তাহার পূর্ব্বে চিত্রের বস্তুকে ধ্যানের দ্বারা হৃদয়ে এমন করিয়া গ্রহণ করেন যাহাতে ধ্যাতা ও ধ্যেয়-বিবর্জিতভাবে চিত্ত কেবলমাত্র চিত্রেয় বস্তুর আকারে উদ্ভাসিত হইয়া থাকে। এই লক্ষণের সহিত পূর্বোক্ত বৌদ্ধ লক্ষণেরও এই অংশে সাদৃশ্য আছে যে সেখানে চিত্রকে ও চিত্তাকার বলিয়া মনে করা হইয়াছে। চিত্তাকার না হইলে চিত্রের উৎপত্তি হইতে পারে না, এ অংশে উভয়ের ঐকমত্য আছে; কিন্তু উভয়ের পার্থক্য এইখানে যে বুদ্ধঘোষ মনে করেন যে চিত্তাকারতাতেই চিত্রের পরিসমাপ্তি ও অভিব্যক্তি।