পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(8 সে সাহিত্যক্ষেত্রে তাহার কুহক-রচনার মধ্য দিয়া একটা সুপ্রতিষ্ঠ স্থান সংগ্ৰহ করিয়া লইলেও কৰ্ম্মক্ষেত্রে এতটুকু অগ্রসর হইতে পারে নাই ! সাহিত্য আর যে আনন্দই দান করুক না কেন,—শূন্ত উদর কিম্ব দারিদ্র্যের রাছগ্রাস হইতে পরিত্রাণ-লাভের কোন পন্থাই সে নির্দেশ করিয়া দিতে পারে না । অবশেষে একদিন বৃদ্ধ মাতা ও স্ত্রী-পুত্রের প্রতি কৰ্ত্তব্য-পালনের জন্ত বাঙ্গালার উদীয়মান সাহিত্যিক সংবাদ-পত্রের অফিসে কৰ্ম্মের উমেদার হইয়া আদিয়া দাড়াইল ! লক্ষ্মীদেবী কৃপা করিলেন—সহজেই প্রভাসের চল্লিশ টাকার একটা চাকুরি মিলিল । কিন্তু এ কি অসহ দুঃখ ! তীব্র পরিহাস | মন যখন কল্পনা-কুঞ্জে পুষ্প-মুরভির জন্ত আকুল হইয় উঠে, গোপন উদ্ধলোকে আদর্শের সন্ধানে ফিরে, কর্তব্য তখন খুনতদারকের বীভৎস রিপোর্ট লিখিবার জন্ত তাগাদ দেয় ! ইংরাজী সংবাদ-পত্রের সারসঙ্কলন, গরিল-বনমামুষের বিচিত্র বার্তা-সংগ্ৰহ, ও গ্রীণলণ্ডের রাজনীতির চর্চা করিয়া ত এমন একঘেয়ে হীন জীবনও বহন করা যায় না ! কিন্তু উপায় নাই! লোকে আদর্শ বা কাব্য পড়িতে চাহে না, কারণ, তাহ দুৰ্ব্বোধ হইয় পড়ে । কাজকর্মের অবসরে এইরূপ দুই-চারিটা উদ্ভট সংবাদ পাইলেই তাহারা কৃতাৰ্থ হইয়া যায় ! রাত্রে প্রভাস কহিল, “খপরের কাগজে ত আর টেক যায় না—জীবনে যেন ক্রমেই কালে কালি মাখছি ! চাকরি রাখা দুষ্কর হয়েছে।” ভারতী । কাত্তিক, ১৩১৭ প্রভাস পরচর্চা বা গ্লানির কথা লিখিতে পারে না, কড়া দুই চারিট সমালোচনায় সহযোগীর প্রতিষ্ঠ। সে দূর করিতে পারে. না, তোষামোদ করিয়া লেখনীর সাহায্যে ধনীর শিরে সে পুষ্পবৃষ্টিও করিতে পারে না, কাজেই স্বত্বাধিকারী বিরক্ত, পাঠকের দলও আগ্রহশূন্ত ! প্রভাস কহিল, "শুনেছি থিয়েটারওলার পয়সা দিয়ে বই নেয়—মোট বাধা মাহিনীও দেয়—তাই বহু চেষ্টায় এই নাটক লিগেছি।” আম কহিলাম, “তুমিও যেমন--থিয়েটারে কেবল হীন রুচি, সেখানে নাটক জোগানো কি তোমার মত লোকের কাজ ! কতকগুলো পচা অশ্লীল ইয়ারকি, আর নাটকের মাথার লাঠি মেরে সেখানে নাটক লিখতে হয় ।” প্রভাস কহিল, ‘তবু তুমি একবার দেখ না ।” প্রভাস নাটক পড়িতে লাগিল—নাটকের নাম,“রাজকন্ত ।” যেখানে যেমন প্রয়োজন, তেমনি ভাবভঙ্গীর সহিত মুর থেলাইয়া সে স্বরচিত নাটক পড়িতে লাগিল ! রচনায় এমন একটা আশ্চৰ্য্য আকর্ষণী শক্তি ছিল যে, আমার নীরস গণিতচর্চারত মস্তিষ্কও মুগ্ধ হইয়া গেল ! করুণরসের স্নিগ্ধ ধারায় আমার চিত্ত আর্দ্র হইয়া অভ্যালিতেছিল, শরীরে রোমাঞ্চ হইতেছিল, অজানা লোকের দুঃখিনী রাজকন্তার মৰ্ম্মবেদনায় অন্তরটা হা-হা করিয়া উঠিতেছিল । যখন নাটক পাঠ শেষ হইল, তখন আমার মনে হইল, যেন একটা স্বপ্ন দেখিতেছিলাম ! সাহিত্যের সহিত আমার কোন সংশ্রব ছিল না, তবু এটুকু বুঝিলাম, যাহা সচরাচর পাঠ