পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२३ পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, আমরা যে সময়ের ঘটনা লিপিবদ্ধ করিতেছি, ভারতবর্ষে তদ্রুপ দুঃসময় পূৰ্ব্বে কখন উপস্থিত হয় নাই। স্বল্পবুদ্ধি নৃপতিরা সে সময়ে ইংরাজ ও ফরাসীর বল অনুভব করিতে পারিয়াও, আগস্তুক “ভবঘুরে” শ্বেতাঙ্গদিগের কলকৌশলে মুগ্ধ হইয়া, তাহাদিগেব দ্বারা সৈনিকবিভাগ অলঙ্কত করিতে বিরত হন নাই । তাহার এই শ্রেণীর শ্বেতচক্ষ্মীর সাহায্যে পরম্পরে বিবাদ বিসংবাদে মত্ত হইতেন । র্তাহারা বুঝিতে পারেন নাই, এই অস্তর্ভেদে র্তাহাদিগের রাজ্যলtভাকাঙ্ক্ষা কখনই ফলবতী হইবে না । ইংরাজ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর প্রাধান্য, বলদৃপ্ততা তখন কাহারও অগোচর ছিল না । সেই সৰ্ব্বগ্রাসিনী ক্ষমতা প্রতিহত করণ মানসে দেশীয় রাজন্তবৃন্দ সমবেত না হইয়া আত্মকলহে মত্ত হইলেন, পরস্পরের কণ্ঠচ্ছেদে হস্ত প্রসারণ করিতে লাগিলেন । দেশীয় নরপতিদিগের মধ্যে মহারাষ্ট্রীয় ভূপতি পিন্ধিয়া সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রবল হইয়া উঠিয়াছিলেন । হোল কার প্রবল প্রতিপক্ষ সিন্ধিয়াকে দমন করিবার জন্ত সতত সচেষ্ট থাকিতেন । সিন্ধিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব লাভের প্রধান কারণ, তাহাদের অধীনে যেরূপ শ্বেতাঙ্গ সেনাপতি পরিচালিত সুশিক্ষিত সৈন্তদল ছিল, হোলকারের তাহ ছিল না। তখন পূৰ্ব্বোক্ত “ভবঘুরে” শ্বেতাঙ্গগণ ভারতবর্ষে আসিয়াই দেশীয় নৃমণিদিগের অধীনে সৈন্তবিভাগে কৰ্ম্ম গ্রহণ করিতেন। দেশীয় রাজাদিগেরও বিশ্বাস ছিল, সেনাদলের সুশিক্ষায়, শৃঙ্খলা স্থাপনে শ্বেতাঙ্গদিগের দ্যায় দেশীয় সেনানায়কের নিপুণ নহেন। এরূপ ধারণা যে ভারতী । পৌষ, ১৩১৭ ভিত্তিহীন ছিল, তাহা নহে । বস্তুতঃ সে সময়ে যে রাজার অধীনে যত শ্বেতচক্ষ্মী সেনানায়ক থাকিতেন, এবং তাহাদিগের পরিচালিত সৈন্ত বল যত অধিক থাকিত, সেই রাজারই বল সেই পরিমাণে অধিক হইত। হোলকারের উপর সিন্ধিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব এই নিমিত্তই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল । এই ত গেল আভিজাত্যবর্গের কথা । তাহার পর ভারতবাসী যোদ্ধৃগণেব কথা। ইহাদিগের স্বদেশপ্রেম বা স্বজাতিপ্রীতি আদেী ছিল না । যেখানে অর্থাগমের অধিকতর সুবিধা হুইত, সেইখানেই ইহার গমন করিয়া সৈন্যদল পুষ্ট করিত। ভারতবাসী কৃতঘ্ন নহে বলিয়া যে প্রবাদ প্রচলিত আছে, এই সময়ে তাহার বিপর্য্যয় ঘটিয়াছিল । “নিমকহারাম।” তখন দোষের বিষয বলিয়। পরিগণিত হইত না । ইহারা আজ যাহার “নিমক” থাইত, কল্য আবার তাহারই বিপক্ষে অস্ত্র ধারণ করিতে কুষ্ঠিত বা লজ্জিত হইত না । সে সময়ে পিতা পুত্রে, সহোদরে সহোদরে, জ্ঞাতি কুটুম্বে ভিন্ন ভিন্ন দলের পক্ষভুক্ত হইয় রণাঙ্গনে পরম্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্রচালনার ক্ষান্ত হইত না । এতদপেক্ষ অধিকতর শোচনীয় অবস্থা আর কি হইতে পারে ? যশবন্ত রাও সে সময়ে হোলকারের রাজসিংহাসনের শোভাবৰ্দ্ধন করিতেছিলেন । র্তাহার অন্ততম সেনানায়ক মেজর আর এল এমব্রোস বিলাতের ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর ডাইরেক্টরদিগের চেয়ারম্যানকে এই সময়ে ভারতবর্ষের অবস্থার সম্বন্ধে যে পত্র লিখিয়াছিলেন, পাঠকের অবগতির নিমিত্ত আমরা তাহার অংশবিশেষের অনুবাদ করিয়া দিলাম।