পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩১৭.djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

טייגר" নিজের মনের ভক্তির চরিতার্থতাই যখন মামুষের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠল, বস্তুত দেবতা যখন উপলক্ষ্য হয়ে উঠলেন এবং ভক্তিকে ভক্তি করাই যখন নেশার মত ক্রমশই উগ্র হয়ে উঠতে লাগল, মানুষ যখন পূজা করবার আবেগটাকেই প্রার্থনা কবলে, কা'কে পূজা করতে হবে সেদিকে চিন্তামাত্র প্রয়োগ করলে না এবং এই কারণেই যখন তার পূজার সামগ্ৰী দ্রুতবেগে যেখানে-সেখানে যেমন তেমন ভাবে নানা আকার ও নানা নাম ধরে অজস্র অপরিমিত বেড়ে উঠল, এবং সেইগুলিকে অবলম্বন করে নানা সংস্কার নানা কাহিনী নানা আচার বিচার জড়িত বিজড়িত হয়ে উঠতে লাগল ;– জগদ্ব্যাপারের সর্বত্রই একটা জ্ঞানের, দ্যায়ের, নিয়মের অমোঘ ব্যবস্থা আছে এই ধারণা যখন চতুর্দিকে ধূলিসাৎ হতে চলল, তখন সেই অবস্থায় আমাদের দেশে সত্যের সঙ্গে রসের, জ্ঞানের সঙ্গে ভক্তির একান্ত বিচ্ছেদ ঘটে গেল । একদা বৈদিক যুগে কৰ্ম্মকাণ্ড যখন প্রবল হয়ে উঠেছিল তখন নিরর্থক কৰ্ম্মই মানুষকে চরমরূপে অধিকার করেছিল ; কেবল নান৷ জটিল নিয়মে বেদি সাজিয়ে, কেবল মন্ত্র পড়ে কেবল আহুতি ও বলি দিয়ে মাতুব সিদ্ধিলাভ করতে পারে এই ধারণাই একান্ত হয়ে উঠেছিল ; তখন মন্ত্র এবং অনুষ্ঠানই দেবতা এবং মামুষের হৃদয়ের চেয়ে বড় হয়ে দাড়াল। তার পরে জ্ঞানের সাধনার যখন প্রাদুর্ভাব হল তখন মামুষের পক্ষে জ্ঞানই একমাত্র চরম হয়ে উঠল—কারণ, র্যার সম্বন্ধে জ্ঞান তিনি নিগুণ নিক্রিয়, সুতরাং তার সঙ্গে আমাদের কোনোপ্রকার সম্বন্ধ হতেই পারে না ; এ অবস্থায় ভারতী । ר כס\tts, x: ব্ৰহ্মজ্ঞান নামক পদার্থ টাতে জ্ঞানই সমস্ত, ব্ৰহ্ম কিছুই নয় বল্লেই হয় । একদিন নিরর্থক কৰ্ম্মই চূড়ান্ত ছিল; জ্ঞান ও হৃদ্ধৃত্তিকে সে লক্ষ্যই করেনি, তার পরে যখন জ্ঞান বড় হয়ে উঠল তখন সে আপনার অধিকার থেকে হৃদয় ও কৰ্ম্ম উভয়কে নিৰ্ব্বাসিত করে দিয়ে নিরতিশয় বিশুদ্ধ হয়ে থাকবার চেষ্টা করলে । তার পরে ভক্তি যখন মাথা তুলে দাড়াল তখন সে জ্ঞানকে পায়ের তলায় চেপে ও কৰ্ম্মকে রসের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে একমাত্র নিজেই মামুষের পরম স্থানট সম্পূর্ণ জুড়ে বসূল, দেবতাকে ও সে আপনার চেয়ে ছোট করে দিলে, এমন কি ভাবের আবেগকে মথিত করে তোলবার জন্তে বাহিরে কৃত্রিম উত্তেজনার বাহিক উপকরণ গুলিকে ও আধ্যাত্মিক সাধনার অঙ্গ করে নিলে । এইরূপ গুরুতর আত্মবিচ্ছেদের উচ্ছম্বলতার মধ্যে মানুষ চিরদিন বাস করতে পারে না । এই অবস্থায় মানুষ কেবল কিছুকাল পর্য্যস্ত নিজের প্রকৃতির এ মাংশের তৃপ্তি সাধনের নেশায় বিহবল হয়ে থাকৃতে পারে কিন্তু তার সৰ্ব্বাংশের ক্ষুধা একদিন না-জেগে উঠে থাকৃতে পারে না। সেই পুর্ণ মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীন আকাজক্ষাকে বহন করে এদেশে রামমোহন রায়ের আবিভাব হয়েছিল। ভারতবর্ষে তিনি যে কোনো নূতন ধৰ্ম্মের স্বষ্টি করেছিলেন তা নয়, ভারতবর্ষে যেখানে ধৰ্ম্মের মধ্যে পরিপূর্ণতার রূপ চিরদিনই ছিল, যেখানে বৃহৎ সামঞ্জস্ত, যেখানে শাস্তশিবমদ্বৈতম্ সেইখানকার সিংহদ্বার তিনি সৰ্ব্বসাধারণের কাছে উদযাটিত করে দিয়েছিলেন ।