পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

諭。V* একবার চাহিয়৷ দেখিলাম, তাপমানে পার! রেখা প্রায় ২৮ ইঞ্চি নামিয়া গিয়াছে। সেই বহুদশী নাবিক বৃদ্ধ জেমিসন, সে যে প্রকৃতির ভাব-পাঠে প্রমে পতিত হয় নাই—বিস্ময়ের সহিত সেই কথা ভাবিতে ভাবিতেই আমি পথ চলিতেছিলাম । সন্ধ্যার পূৰ্ব্বেই প্রজাদের সামান্ত কাজকৰ্ম্ম সারিয়া যখন আমি জলার ধার দিয়া ফিরিতেছিলাম, বাতাস তখন বেগে বহিতেছিল, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র থও মেঘে নীল আকাশ ধূসর বর্ণ ধারণ করিয়াছে। ক্রমে সেই থও খণ্ড মেঘগুলা জমাট বাধিয়া যেন বেল গাড়ীর লাইন তৈয়ার করিতেছিল। সমুদ্রের বক্ষে পারদের উজ্জল আস্তরণের দ্যায় যে ঝকৃমকানি ছিল—এখন সেখানে যেন একখানা ঘষা কঁাচের চাদর বিছাইয়া দেওয়া হইয়াছে। আর সমুদ্রের অন্তঃস্তল ভেদ করিয়া শ্রবণ-ভৈরব জলোচ্ছাসের শব্দকে প্রতিহত করিয়া যে একটি ক্ষীণ করুণ ক্রনীনের সুর উত্থিত হইতেছিল, সে যেন তাহারই ললাট-নিহিত কোন আসন্ন বোগবেদনারই মুর্ছনায় পরিপূর্ণ করুণ মৰ্ম্মভেদী ক্রেনন-ধ্বনি ! চ্যানেলের বহুদূরে একখানা বেলফাষ্ট গামী ছোট জাহাজ যেন লক্ষ্যভ্রষ্ট শীকারীর করচু্যত আছত পক্ষীর মত ডান মেলিয়া শ্রান্ত দেহে প্রাণাস্ত চেষ্টায় অগ্রসর হইবার জন্ত বৃথা পরিশ্রম করিতেছিল। বাতাসের বেগ এবং সমুদ্রের তরঙ্গ তাহাকে কোন মতেই গন্তব্য পথে অগ্রসর হইতে দিতেছিল না, বরং বাধা দিয়া প্রতিহতই করিতেছিল। বৈকালে বেড়াইতে আসিয়া আমরা যে ভারতী পৌষ, ১৩২৯ প্রকাগু পালতোলা জাহাজখানাকে দেখিয়া গিয়াছিলাম—সেখান এখনও দৃষ্টি-পথের মধ্যেই রহিয়াছে, বাহির হইয়। যাইতে পারে নাই। এখন কেবল ঝড়ের মুখে আত্মরক্ষার উপায়-চেষ্টায় উত্তর দিকে জলের ধারে লইয়া যাইবার জন্ত তাহার তরফ হইতেও অক্লাস্ত পরিশ্রম চলিতেছিল । সুদূর আকাশেব প্রাস্তে ধুমপুঞ্জবৎ মেঘ শ্রেণী যেখানে রহিয়া রহিয়া বিদ্যুতের লোলজিহবা মেলিয়া নক্ষত্রপুঞ্জশোভা নীলাকাশকে গ্ৰাস করিবার উদ্যোগ করিতেছিল, সেই দিকে চাহিয়া দেখিলাম সমস্ত আকাশ সজল মেঘে ভরিয়া গিয়াছে, ভীত সমুদ্র-পক্ষীর দল, বাক বাধিয়া ইতস্ততঃ উড়িয়া ৰেড়াইতেছে। আসন্ন ঝটিকার হস্ত হইতে রক্ষা পাইবার জন্ত মানব-শিশুর মতই লক্ষ্যহীন তাহদের চঞ্চল গতি ! বকের দল শাদা ডান মেলিয়া ক্লাস্তভাবে জলার ধারেই জটলা পাকাইতে ছিল, সেই তাহাদের নিরাপদ আশ্রয় ! পশ্চিম আকাশের প্রান্তে তথনও সূর্য্যাস্তের স্নান আভাটুকু সম্পূর্ণ মিলাইয়া যায় নাই। বৃক্ষপত্রে করুণ মৰ্ম্মর-ধ্বনি, এবং দেবদারু ও পনস বৃক্ষের শিরে বাতাসের রুদ্ধ আস্ফালন শুনিতে শুনিতে আমি সোজা পথ ছাড়িয়া, আগের পথ ধরিয়া বাড়ী ফিরিয়া আসিলাম । রাত্রি নয় ঘটিকা ! বাতাসের বেগ অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিয়াছিল । বাহিরে গুরু গুরু মেঘগর্জন ! দশটার সময় ঝটিকা আরম্ভ হইল । মধ্য রাত্রি! এমন প্রলয়-ঝটিকা আমার জীবনে আমি এই প্রথম দেখিলাম ! ওকের জানাল দেওয়া আমার ছোট ঘর খানিতে বসিয়া প্রলয় রজনীর তাণ্ডব নৃত্য